কলকাতা: তিনি কি পেশাদার রাজনীতিবিদ? নাকি নেশায়? রাজনীতি করেই কি তাঁর সংসার চলে? তাঁর পারিবারিক বিন্যাসই বা কি? ববি হাকিমকে নিয়ে এ হেন প্রশ্ন অনেকের মনেই উঁকি দিয়েছে৷ প্রথম সারির এক সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের পরিবারের কথা এবার খোলাখুলি জানালেন কলকাতার মেয়র৷ পেশা থেকে নেশা, শিক্ষা, মা থেকে স্ত্রী, সবার কথাই খোলামেলা ভাবে আলোচনা করেছেন কলকাতার মহানাগরিক৷
আরও পড়ুন- কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের কবলে সুন্দরবনের মৎস্যজীবী, টেনে নিয়ে গেল দক্ষিণরায়
ববি হাকিম জানান, ছোট থেকে রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ব্যবসাও করেন৷ সরকারের থেকে ঋণ নিয়ে পাঁচ বন্ধু মিলে একটি ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি৷ ক্যানিংয়ে বরফকল খুলেছিলেন তাঁরা৷ সেই ব্যবসা আজও আছে৷ পাশাপাশি নিউ আলিপুরে একটি প্লাস্টিকের কারখানা এবং একটি স্নানঘরের সজ্জা সামগ্রীর দোকান আছে তাঁর৷ ববি হাকিম জানিয়েছেন, তাঁর জীবনে তাঁর মায়ের ভূমিকার কথা৷
মেয়র জানান, ছোট থেকেই সম্প্রীতির পরিবেশে বেড়ে ওঠা তাঁর৷ দাদু ছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়৷ তাঁর মা মুখোপাধ্যায় পরিবারের মেয়ে৷ আর বাব হাকিম৷ তাঁর আক্ষেপ, বিজেপি’র বাড়বাড়ন্তের পরেই মুখোপাধ্যায়-হাকিম নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে৷ বাবার বাড়ি কিংবা মামবাড়ি, কোনওদিন কোথাও এই বিষয়ে এত আলোচনা হয়নি৷ এদিন নিজের মাকে নিয়েও অনেক কথা বলেন ফিরহাদ৷ তিনি জানান, তাঁর মা স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন৷ সারা জীবন স্কুলে পড়িয়েছেন৷ অঙ্ক কষতে বড্ড ভালোবাসতেন তিনি৷ রাত জেগে অঙ্ক কষতেন৷ তবে এক সময় তাঁদের মানুষ করার জন্য পড়াশোনা ছেড়ে সংসারে মন দিয়েছিলেন৷
ববি বলেন, ‘বিয়ের পর দেখেছি নতুন বৌমার উপর সংসারের সব দায়িত্ব চাপিয়ে মা মন দিয়ে অঙ্ক কষেছেন৷’ সহাস্যে ববি বলেন, ‘এমন মা আর শাশুড়ি আগে দেখিনি৷’ আদ্যন্ত বাঙালি তাঁর মা হিন্দিতে পড়াশোনা করেছেন এলাহাবাদে৷ সারা জীবন মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছেন৷ চাকরি করতেন গার্ডেনরিচের মৌলানা আজাদ মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলে। শিক্ষকতা করতে করতেই উর্দুও শেখা তাঁর মায়ের৷ এমনকী এক সময় কলকাতার মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের জীবন বিজ্ঞানের উর্দু ভাষায় লেখা খাতা তাঁর মা-ই দেখতেন৷
আর স্ত্রী রুবি? পরিবহণমন্ত্রী জানান, বিয়ের দিনেই প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে দেখা তাঁর৷ বাবা বিয়ের আগে একবার দেখা আসতে বললেও তিনি বলেছিলেন, ‘‘তুমি নিজে পছন্দ করেছো, এর পর আমার আর কিছুই বলার থাকে না।’’ রুবিও প্রথমবার বিয়ের আসরেই দেখেছিলেন ববিকে৷ এর পর ৩৭ বছর ধরে তাঁদের সুখের সংসার৷ শক্ত পিলারের মতো পাশে থেকেছেন রুবি৷ ববি বলেন, ‘‘আমার কঠিন সময়ের সাক্ষী থেকেছে ও। পুলিশের মার খেয়ে বাড়ি ফিরেছি। আন্দোলন করতে গিয়ে মাথা ফেটে গিয়েছে। ও সবটাই সামলেছে।’’
এক সময় তাঁর বাবা-মা চেয়েছিলেন, রাজনীতি থেকে সরে আসুক ছেলে। ব্যবসায় মন দিক। রুবিকেও বলতেন, ‘‘ওঁকে ব্যবসা করতে বলো।’’ কিন্তু বরাবরই ববিকে রাজনীতিতে উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন রুবি৷ ববি বলেন, ‘‘রুবি আমার বলেছিল, তোমার যেটা পছন্দ, তুমি সেটাই করবে। ও (রুবি) বাবা, মা-কে-ও বলেছিল, ‘আমায় ছেড়ে চলে যেতে পারে, কিন্তু রাজনীতি ছাড়বে না।’