মহিষাদল: ভাগ্যের ফেরে ছোটবেলাতেই বাবা-মাকে হারিয়েছিল সে৷ বাপ-মা হারা মেয়ের কপালে দুঃখের এখানেই শেষ ছিল না৷ একদিন অজান্তেই নারী চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে তার ঠাঁই হয় নিষিদ্ধ পল্লীর অন্ধকার ঘরে৷ বেশ কয়েক বছর যৌনপল্লীতেই জীবন কাটে ওই নাবালিকার৷ কিন্তু হার মানেনি৷ চলছিল সমাজের মূল স্রোতে ফেরার মরিয়া চেষ্টা৷ একদিন মেদিনীপুরের মহিষাদলের এক যৌনপল্লিতে খাবার সরবরাহ করতে আসা যুবকের সঙ্গে দেখা হয় তার৷ সেখান থেকেই প্রণয়৷ সবশেষে বিয়ে৷
আরও পড়ুন- এখনও স্বাভাবিকের নীচেই পারদ, বৃহস্পতিবার থেকে ফের বৃষ্টির ভ্রুকুটি
যদিও এই পর্বটা মোটেও সহজ ছিল না৷ বিষয়টা একেবারেই মেনে নিতে পারেনি ওই যুবকের পরিবার৷ সেই সঙ্গে ওই নাবালিকাকে যৌন পল্লী থেকে বার করে আনাটাও সহজ ছিল না৷ পরে স্থানীয় ক্লাবের সহযোগিতায় চারহাত এক হয়৷ হাসিমুখে শ্বশুরবাড়ি চললেন নববিবিহিতা৷
বেশ কয়েক বছর আগের কথা৷ নারী পাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে মুর্শিদাবাদের লালগোলার বাসিন্দা ঝুমা ঘোষ৷ নাবালিকা ঝুমাকে নিয়ে আসা হয় যৌনপল্লিতে৷ গায়ের জোরে তাকে নামানো হয় দেহ ব্যবসায়৷ অনেক অন্ধকার গলি ঘুরে শেষমেশ তাঁর ঠাঁই হয়েছিল মহিষাদলের যৌনপল্লিতে। সেখানেই খাবার দিতে আসত বাসুলিয়ার বাসিন্দা পেশায় হোটেল ব্যবসায়ী ছোট্টু দাস। খাবার দিতে গিয়েই ছোট্টুর সঙ্গে আলাপ হয় ঝুমার। এর পর প্রণয়৷ মাস পাঁচেক সম্পর্কের পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় তারা৷ কিন্তু বিয়েতে রাজি ছিল না ছোট্টুর পরিবার৷ মধ্যস্থতায় নামে ক্লাবের সদস্যরা৷ তাঁরাই ছোট্টু ও যৌনপল্লীর সঙ্গে কথা বলে৷ সোমবার ক্লাবঘরেই বসে বিয়ের আসর৷ ছেলের বাড়ির উপস্থিতিতেই চারহাত এক হয়ে যায়৷ কন্যাদান করেন ক্লাবেরই এক সদস্য৷
ক্লাবের সম্পাদক মানসকুমার বেরার কথায়, ‘‘যৌনপল্লির মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়ে আমাদের ক্লাবের কাছে দরবার করে ছোট্টু। এটা একটা মহৎ কাজ৷ ফলে আমরাও এগিয়ে আসতে দেরি করিনি। ছেলের বাড়ি তো বটেই, যৌনপল্লিতে গিয়েও আমরা মেয়েটির বিয়ের ব্যাপারে সবাইকে রাজি করাই। এর পরেই ওদের চার হাত এক করে দিই।’’ নতুন জীবন পেয়ে চোখের জল বাঁধ মানছিল না ঝুমার৷ ঝুমা বলেন, ‘‘যৌনপল্লির অন্ধকার জীবন থেকে বেরিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাব, কখনও ভাবতেই পারিনি। ছোট্টুর জেদ আর ক্লাবের সদস্যদের সহযগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে৷ সবাই আমাকে যে ভাবে আপন করে নিয়েছেন, তাতে আমি অভিভূত।’’