সিবিআই তদন্ত মানেই কি ‘সমাধান’? বাংলায় বহু কেলেঙ্কারি তদন্তে রয়েছে সিবিআইয়ের দীর্ঘ ‘নীরবতা’!

সিবিআই তদন্ত মানেই কি ‘সমাধান’? বাংলায় বহু কেলেঙ্কারি তদন্তে রয়েছে সিবিআইয়ের দীর্ঘ ‘নীরবতা’!

 

কলকাতা: বগটুই কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। যা শুনে অনেকেই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হবে বলেই আশা রেখেছেন। বিশেষ করে বিরোধী শিবির উচ্চ আদালতের রায়ে ভীষণ খুশি৷ কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে আদৌ কি সিবিআই এই তদন্তে ভার নিতে উপযুক্ত?

বিশেষ করে বাংলার ক্ষেত্রে সিবিআই তদন্তের যে গতিপ্রকৃতি তা দেখে এমন প্রশ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক। অতিত ঘাঁটলে বাংলায় সিবিআই তদন্তের একাধিক অসফলতার খতিয়ান সামনে আসে। ফিরে দেখা যাক, রাজ্যে কোন কোন ঘটনার তদন্তভার ছিল সিবিআইয়ের হাতে।

 
নোবেল চুরি: ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ, শান্তিনিকেতন থেকে চুরি যায় বিশ্বকবির নোবেল। এছাড়াও মৃণালিনী দেবীর বালুচরি শাড়ি, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার আংটি, সোনা-রুপোর কিছু জিনিসপত্র, রবীন্দ্রনাথের প্রিয় সোনার পকেট ঘড়িসহ মোট ৩৭ টি জিনিস সেদিন চুরি হয়। ঘটনার দিনেই তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়ার আবেদন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০০৯ সালে আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত বন্ধ করে সিবিআই। চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে জানায়, চুরির কিনারা তারা করতে পারেনি।

 

তাপসী মালিক হত্যাকাণ্ড: ২০০৬, তারিখ ৪ ডিসেম্বর। ধর্ষণের পর খুন করা হয় সিঙ্গুরের কৃষক পরিবারের মেয়ে অষ্টাদশীর তাপসী মালিককে। তদন্তভার নেয় সিবিআই, ষোল বছর পার, আজও শাস্তি পায়নি অভিযুক্তরা।

নন্দীগ্রাম গণহত্যা: ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ, নন্দীগ্রামে গণহত্যার ঘটনায় তোলপাড় হয় রাজ্য। বাম আমলে পুলিশের গুলিতে ১৪ জনের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। নিখোঁজ হন অন্তত ১০০ জন। ঘটনার তদন্তভার সিবিআই নেয়। আজও অধরা দোষীরা।

সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারি: ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে রাজ্য জুড়ে শোরগোল ফেলে দেয় সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা। নাম জড়ায় শাসক দলের একাধিক সাংসদ, বিধায়কের। প্রথমে দুরন্ত গতিতে সিবিআই তদন্ত শুরু করলেও পরে শ্লথ হয়ে গতি। তদন্ত এখনও চলছে।
 

রোজভ্যালি চিটফান্ড কেলেঙ্কারি: সারদার মতো রোজভ্যালি চিটফান্ড কেলেঙ্কারিকাণ্ডেও মুখ পোড়ে রাজ্যের। নাম জড়ায় শাসক দলের সাংসদ, নেতা-নেত্রীর। ২০১৫ সালে সংস্থার কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুকে গ্রেফতার করে সিবিআই। মামলা সুরাহা হয়নি এখনও।  

নারদ-কাণ্ড: সিবিআই- ২০১৪ সালে ম্যাথু স্যামুয়েল এবং তাঁর সহকর্মী অ্যাঞ্জেল আব্রাহাম প্রায় বাহান্ন ঘণ্টা ধরে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত একটি স্টিং অপারেশন করেন। যা ২০১৬ সালে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রকাশ্যে আসে। গোপন ক্যামেরায় রেকর্ড করা ওই ভিডিওতে একাধিক নেতা-মন্ত্রীকে আর্থিক লেনদেন করতে দেখা গিয়েছিল। ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুলতান আহমেদ, অপরূপা পোদ্দার, শঙ্কুদেব পণ্ডা, আইপিএস অফিসার এস এম এইচ মির্জাকে টাকা নিতে দেখা যায়। এই স্টিং অপারেশন সামনে আসার পরই রীতিমতো তোলপাড় হয় সর্বত্র।

 
কয়লা পাচারকাণ্ড: একুশের ভোটের আগে কয়লাপাচার কাণ্ডের তদন্তে তৎপর হয়েছিল সিবিআই। অভিষেকের বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী রুজিরাকে জেরা করেছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা। রুজিরার লন্ডনের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করেন।এমনকি জেরা করা হয় অভিষেকের শ্যালিকাকেও। এখনও তদন্ত চলছে।

গরুপাচারকাণ্ড: গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে রাজ্যে কয়লা এবং গরু পাচার-কান্ডের তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সেই মামলায় ইতিমধ্যে একাধিক ব্যক্তিকে জেরা করা হয়েছে। সাংসদ অভিনেতা দেব একাধিকবার জেরার মুখোমুখি হয়েছেন। মামলায় একাধিকবার হাজিরা এড়িয়েছেন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
 

এই তালিকার সর্বশেষ নাম বগটুই হত্যাকাণ্ড। গত সোমবার রামপুরহাটের অখ্যাত এই গ্রামে তৃণমূলের উপপ্রধানকে বোমা মেরে খুন করে দুষ্কৃতীরা। তারপরেই বদলার আগুনে পোড়ে বগটুই। রাতের অন্ধকারে গ্রামের একাধিক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আগুনের ঝলসে মৃত্যু হয় ৮ জনের। ঘটনার তদন্তে রাজ্যের তরফে প্রথমে সিট গঠন করা হলেও, শুক্রবার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট… ভয়ানক এই হত্যালিলার নেপথ্যের চক্রীকে খুঁজে বের করতে পারবে সিবিআই? নাকি অসফল তালিকায় যুক্ত হবে আরও এক তদন্তের নাম…। উত্তর দেবে সময়।