খতায়-কলমে বহিষ্কৃত, উপাচার্যকে হেনস্থা করা ছাত্রনেতা গিয়াসউদ্দিনের এত দাপট কী ভাবে?

খতায়-কলমে বহিষ্কৃত, উপাচার্যকে হেনস্থা করা ছাত্রনেতা গিয়াসউদ্দিনের এত দাপট কী ভাবে?

0b462daf91e4c5a25e3d53258d26ee72

কলকাতা: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিগ্রহের ঘটনায় উত্তাল শিক্ষা মহল৷ উপাচার্য মহম্মদ আলিকে চরম হেনস্থা, অশালীন শব্দচয়নে বিস্মিত গোটা রাজ্যের মানুষ৷ তিনি যে সেদিন ‘গুন্ডামির কথাবার্তা’ বলেছিলেন, তা স্বীকার করে নিয়েছেন অভিযুক্ত ছাত্রনেতা গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল৷ তাঁর কথায়, ‘‘ওঁর কটু কথা শোনার পরেই হুমকি দিয়েছিলাম৷’’ উপাচার্য-নিগ্রহের অভিযোগে আপাতত শ্রীঘরে গিয়াসউদ্দিন৷ যদিও উপচার্য নিগ্রহের ঘটনা তার কাছে নতুন নয়৷ এর আগে ২০১৭ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন উপাচার্য আবু তালেব খান এবং ২০১৮ সালে মহম্মদ আলিকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল এই গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধেই।

আরও পড়ুন- যেমন কথা, তেমন কাজ! বগটুই কাণ্ডে বড় প্রতিশ্রুতি পালন মমতার

খাতায় কমলে চার বছর আগেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন গিয়াসউদ্দিন৷ বহিষ্কৃত হয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ থেকেও৷ কিন্তু, প্রশ্ন হল বহিষ্কৃত হওয়ার পরেও কী ভাবে এত দাপট গিয়াসউদ্দিনের? কী ভাবে উপাচার্যের ঘরে ঢুকে গুন্ডামির কথা বললেন তিনি?

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর,  ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হিসেবে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন গিয়াসউদ্দিন। কিন্তু একাধিক পেপারে সাপ্লিমেন্টারি পাওয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাঠ তিনি আদৌ শেষ করতে পেরেছেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ অথচ ২০১৪ সালে এহেন এক ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি করা হয়। এর পর থেকেই বাড়তে থাকে গিয়াসউদ্দিনের দাপট৷ ২০১৭ সালে আলিয়ার নিউ টাউন ক্যাম্পাসের হস্টেল থেকে টাকা তোলা, ক্যান্টিনের টাকা নয়ছয় করার মতো একাধিক অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে৷ এমনকী সব সীমা লঙ্ঘন করে তৎকালীন উপাচার্য আবু তালেব খানকে হেনস্থা করেন বলেও অভিযোগ৷ সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরও চালান গিয়াসউদ্দিন৷ এর জন্য হাজতবাসও করতে হয় তাঁকে। ২০১৮ সালে অধ্যাপক মহম্মদ আলি উপচার্য পদে বসলে, তাঁকেও হেনস্থা করেন৷ তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের ইউনিট থেকে তাঁকে বার করে দেওয়া হয়৷ এর পরেও কী ভাবে এত দাপট? 

সেই জবাব অবশ্য গিয়াসউদ্দিন নিজেই জানিয়েছেন৷ তৃণমূলের প্রাক্তন ছাত্রনেতার কথায়, ‘‘প্রাক্তন বা বর্তমানের বিষয় নয়। বিষয়টা হল, বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যায় হয়েছে। অথচ সবাই চুপ। তাই প্রতিবাদ করতে ওখানে গিয়েছিলাম। উপাচার্য দীর্ঘ ক্ষণ আমার সঙ্গে কথা না বলে বসিয়ে রাখেন। অপেক্ষা করানোর পর কটু কথা বলেছেন। ওঁর কটু কথা শোনার পরেই আমি গুন্ডামির কথাবার্তা শুরু করেছিলাম।’’ অশালীন ভাষা প্রসঙ্গে গিয়াসউদ্দিনের বক্তব্য, ‘‘আমি নবারুণ ভট্টাচার্যের পথ অনুসরণ করেছিলাম৷ গালাগালি তো আবেগ আর রাগের বহিঃপ্রকাশ৷ গালাগালি না-করলে খুনোখুনি বাড়ে। ওটা গালাগালি নয়, ওটা আমাদের প্রতিবাদ। গালাগালির জন্যেই ওই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে৷ পিএইচ ডি-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় যে-দুর্নীতি হয়েছিল, সেই সত্যটা সামনে এসেছে।’’