কলকাতা: প্রতিদিন ন্যায়ের আশা নিয়ে আদালত চত্বরে ভিড় জমান হাজারো মানুষ৷ বিচারও পান তাঁরা৷ কিন্তু খুব কম মামলাই রয়ে যায় স্মরণে৷ আর কোন বিচারপতি সেই রায় দিলেন, তা আর ক’জনে মনে রাখে৷ আসলে আমাদের ‘প্রিয়’, ‘অপ্রিয়’র তালিকাটা বেশ সাজানো গোছানো৷ প্রিয় রাষ্ট্রনেতা থেকে অভিনেতা, খেলোয়াড়, খাবার, এমনকী পছন্দের জায়গা, সব উত্তরটাই জানা৷ কিন্তু প্রিয় বিচারপতি? এতদিন সেই উত্তর ঠোঁটস্থ না থাকলেও, এবার হয়তো সেই ‘প্রিয়’ তালিকায় জুড়ে গেল একটা নাম৷ তিনি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷
আরও পড়ুন- ব্রেকিং: সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর, মোটা টাকা বোনাস ঘোষণা নবান্নের
সেলুলয়েডে আমরা বহু বিচারপর্ব দেখেছি৷ অনেক ডায়লগও শুনেছি৷ তারই মধ্যে একটি জনপ্রিয় হিন্দি ছবির সংলাপ ছিল, ..সরকার, পুলিশ, প্রশাসন কথা না শুনলেও আদালত শুনবে। আর ন্যায় বিচার দেবে। সত্যিই তো সেই ভরসাতেই মানুষ ছুটে যায় আদালতের দোরগোরায়৷ এরই মধ্যে কিছু মামলা দাগও কেটে যায়৷ বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে তেমনই কিছু দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ যা তাঁকে করে তুলেছে বাঙালির প্রিয় বিচারপতি৷ স্কুল সার্ভিস নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক মামলা চলছে তাঁর বেঞ্চে৷
সোমবার সকলের নজর তখন কলকাতা হাই কোর্টের ১৭ নম্বর ঘরে৷ ঘড়ির কাঁটা তখন পৌনে তিনটে। রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুলের বদলি অনিয়ম সংক্রান্ত মামলা শেষ হয়েছে সবে৷ পরবর্তী শুনানির দিনও নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিচারপতি। এরই মধ্যে এসএসসি’র বিস্তর অনিয়ম প্রসঙ্গে ভরা এজলাজে এসএসসি, রাজ্য এবং স্কুলের আইনজীবীদের সামনেই তিনি বলেন, ‘‘মনে রাখবেন ভারতে একটা জুডিশিয়ারি আছে।” এর পরেই আইনজীবী বিশ্বরূপ বিশ্বাস বিচারপতির উদ্দেশ্যে বলেন, ১৭ নম্বর কোর্টেই একমাত্র সুবিচার পাওয়া যাবে। সারা রাজ্যে জনমানসে এমন এই ধারণাটা ছড়িয়ে পড়েছে। এরপরেই তাঁর মক্কেলের বক্তব্য শোনান তিনি। যিনি বলেছেন, “স্যার, বিচারপতি ‘ক’ বা বিচারপতি ‘খ’ নয়, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চেই মামলা করে দিন৷ এখানেই আমি সঠিক বিচার পাব।” এমন কথা শুনে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়৷
শুধু একজন আইনজীবী নন৷ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ে আস্থা রেখেছেন আরও অনেকে৷ আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, তাঁর এক মক্কেল ঠাকুরপুকুরের শিক্ষিকা। দীর্ঘদিন চাইল্ড কেয়ার লিভের বকেয়ার সঙ্গে আটকে থাকা বেতন পাচ্ছিলেন না। ২০১৮ সাল থেকে এই সমস্যা ভোগ করছিলেন তিনি। এর আগে হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চে শুনানি হয়৷ কিন্তু সুরাহা হয়নি৷ অবশেষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চের নির্দেশ ২০ দিনের মধ্যে তাঁর সমস্যার নিষ্পত্তি ঘটে। এই কথা শোনার পরেই বিচারপতি বলেন, এর চেয়ে ভাল খবর কিছু হতে পারে না।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে আশার আলো খুঁজছেন এসএসসি আন্দোলনকারীরাও৷ অনেকে তো জেলায় জেলায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যত প্রচার শুরু করেছেন, ‘বেকারের নয়নমণি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়’। তাঁদের কথায়, অপদার্থ কমিশন ৭ বছরেও নিয়োগ দিতে পারেনি৷ তার উপর এসএসসি গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম শ্রেনীর শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি৷ সব শেষে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসেই শুরু হয়েছে দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলার কৌশল৷ একাধিক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বারবার শিরোনামে উঠে এসেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ হাজার হাজার বিচারপ্রার্থীর আস্থা জিতে তিনি এখন নয়নের মণি৷
তবে হাইকোর্টের কোন বিচারপতি কোন কোন মামলার বিচার করবেন, তা ঠিক করার দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির। ফলে চাইলেও সব মামলা যে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে হবে না, তা নিশ্চিত৷ তবে হয়তো বিতারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই বলতে পারেন, “মাথায় বন্দুক ধরতে পারেন। মারতে পারেন। মরতে রাজি আছি। কিন্তু দুর্নীতি দেখলে চুপ করে থাকব না। আওয়াজ তুলবই।”
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>