ছোট বয়সেই দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিজ্ঞা, মাতৃ দিবসের আগে মা পুজো পড়ুয়াদের

ছোট বয়সেই দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিজ্ঞা, মাতৃ দিবসের আগে মা পুজো পড়ুয়াদের

কোচবিহার: রাত পোহালেই আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস বা ইন্টারন্যাশনাল মাদার্স ডে। আর সোশ্যাল মিডিয়া ভরে যাবে মায়েদের ছবিতে। নেটিজেনরা প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে যাবেন, তাঁরা মাকে কতটা ভালোবাসেন। বাবা-মার প্রতি দেখনদারি মৌখিক ভালোবাসার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা। অনেকেই মনে করেন, বৃ্দ্ধ বাবা-মাকে পাঠানোর মতো সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষার অভাব। প্রথম থেকেই যদি শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া যায়, দেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা কমে যাবে। আর তাই তো ধূপগুড়ি ব্লকের বারোঘরিয়া বটতলী স্বর্নময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল মা পুজো। 

কী এই মা পুজো?  স্কুলের পড়ুয়ারা তাদের মায়ের পা প্রথমে ধুইয়ে দেয়। তারপর সেই পা মুছিয়ে মুখে মিষ্টি তুলে দেয়। পাল্টা মায়েরা পাল্টা তাঁদের সন্তানের মুখে মিষ্টি তুলে দেন। পড়ুয়ারা মাকে প্রণাম করে সারাজীবন পাশে থাকার, দায়িত্বভার নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জয় বসাকের নেতৃত্বে হয়। কিন্তু হঠাৎ করে মায়ের পুজো কেন?  মায়ের প্রতি ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ এই পুজোর মধ্যে আসবে? শিক্ষারত্ন সম্মানে ভূষিত জয় বসাক বলেন, ইন্দোনেশিয়ায় বাবা-মাকে পুজো করার প্রচলন রয়েছে। স্কুলের পড়ুয়ারা তাঁদের বাবা-মাকে পুজো করেন। ইন্দোনেশিয়ায় কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম নেই। তাই তিনি একটা চেষ্টা করছেন। 

এদিন স্কুলে ঢুকতেই দেখা যায় একেবারে সাজো সাজো রব। সারি সারি চেয়ার পাতা রয়েছে। সেখানেই মায়ের বসে আছে। মায়েদের পায়ের কাছে বসে রয়েছে তাঁদের সন্তানরা। লাউড স্পিকারে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জয় বসাক নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। সেই অনুযায়ী খুদে খুদে পড়ুয়ারা মায়েদের পা ধুইয়ে দেয়। মুছিয়ে দেয়। মিষ্টি খাইয়ে দেয়। পাল্টা মায়েরাও শিক্ষকের পরামর্শ মতো মিষ্টি খাইয়ে দেন সন্তানদের। 

ছোট ছোট সন্তানদের কাছ থেকে পুজোর নামে সেবা পেয়ে আবেগঘন হয়ে পড়েছেন মায়েরা। কারও চোখের কোনা ভিজে ভিজে তো কথা বলতে গিয়ে কারও গলা ধরে আসছে। কিন্তু সন্তানদের হাত থেকে পুজো পেয়ে আপ্লুত মায়েরা শিক্ষকের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। কমলা রায় নামে এক পড়ুয়ার মা বলেন, এখনকার অনেক বাচ্ছা বড় হয়ে যাওয়ার পর বাবা-মাকে পাত্তা দেয় না। অবহেলা করে। অত্যাচার করে। বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। ছোটোবেলা থেকে বাচ্চাদের মধ্যে সেই নীতিবোধ,দায়িত্ববোধ শেখাতে এই ধরনের উদ্যোগ যথেষ্ট কাজে লাগবে।

চুতর্থ শ্রেণির পড়ুয়া সুরস্মৃতি রায় বলেন, মায়ের পা ধুইয়ে, মুছিয়ে মিষ্টি খাইয়েছি। খুব ভালো লাগছে। বাবা-মাকে ভালো রাখার, তাঁদের প্রতি দায়িত্ববান হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 + 3 =