পরীক্ষা না দিয়েই সরকারি চাকরি, ফের নিয়োগ কেলেঙ্কারি SSC-র

পরীক্ষা না দিয়েই সরকারি চাকরি, ফের নিয়োগ কেলেঙ্কারি SSC-র

230ec4911e0f7594874b31db26ed13e5

কলকাতা:  স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রিপোর্ট পেশ করল রঞ্জিত বাগ কমিটি৷ প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ৩৮১ জন প্রার্থীকে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে৷ বলে হয়েছে, স্ক্যান সই ব্যবহার করে এই সুপারিশপত্র দেওয়া হয়৷ সর্বোপরী, এই ৩৮১ জন প্রার্থীর মধ্যে ২২২ জনের নাম কোনও প্যানেল বা ওয়েটিং লিস্টে ছিল না৷ কোনও পার্সোনালিটি টেস্টেও তাঁরা অংশ নেননি৷ এই দুর্নীতি-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মামলাকারীদের আইনজীবী৷ 

আরও পড়ুন- তৃণমূল ছাড়ছেন পাঁচ বিধায়ক, আঁচ পেয়েই জরুরি বৈঠক ডাকলেন অভিষেক

এই দুর্নীতির সঙ্গে এসএসসি’র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা, সৌমিত্র সরকার, অশোক সাহা যুক্ত ছিলেন বলেও রঞ্জিত বাগ কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে৷ জানা গিয়েছে, শান্তিপ্রসাদ সিনহা ভুয়ো সুপারিশপত্র কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে দিতেন৷ সেই সুপারিশপত্রের ভিত্তিতে নিয়োগপত্র তৈরি করাতেন কল্যাণময়৷ এর পর এসএসসি’র নব নির্মিত ভবনে ডেকে ভুয়ো প্রার্থীদের তা হস্তান্তর করা হত৷ এই ভবন থেকে যে সুপারিশ পত্র দেওয়া হবে, তা কিন্তু পর্ষদের ওয়বসাইট বা বিজ্ঞপ্তি, কোথাও উল্লেখ ছিল না৷ অর্থাৎ যাঁরা নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন তাঁরাও জানতেন বিষয়টি ভুয়ো৷ ইমেল, পেনড্রাইভ বা সিডি’র মাধ্যমে এসএসসি’র কাছে এই সুপারিশপত্র পৌঁছত৷ 

গ্রুপ ডি নিয়োগের ক্ষেত্রেও অবসরপ্রাপ্ত বিতারপতি রঞ্জিত কুমার বাগ একটি রিপোর্ট পেশ করেছিলেন৷ শুক্রবার একই ভাবে গ্রুপ সি মামলায় রিপোর্ট পেশ করে তাঁর কমিটি৷ কোথায় কোথায় বেনিয়ম হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে, রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে তা তুলে ধরা হয়েছে৷ রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ১৮ মে ২০১৯ সালে এসএসসি’র প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়৷ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ৩৮১ জনকে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়৷ পরবর্তী সময়ে তাঁরা নিয়োগপত্রও হাতে পান৷ তাঁদের মধ্যে ২২২ জন পরীক্ষাতেই বসেননি৷ এসএসসি’র দফতর এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক দফতরের আধিকারিকরা কোনও না কোনও ভাবে এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এছাড়াও বিচারপতি বাগের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসএসসি’র যে পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি৷ গ্রুপ ডি মামলার রিপোর্টেও একথা উল্লেখ করা হয়েছিল৷ তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুমোদনক্রমে এই কমিটি গঠিত হয়েছিল৷ তবে রাজ্য সরকার বা শিক্ষা দফতরের কাছে এ সম্পর্কে আদৌ কোনও  সূচনা ছিল কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে৷ 

স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে শিক্ষা দফতর, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কোন কোন আধিকারিক কী কী ভাবে নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তা রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে৷ আরও বলা হয়েছে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অশোক কুমার সাহা, সৌমিত্র সাহা এবং শান্তিপ্রসাদ সিনহার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত৷ কারণ তাঁরা প্যানেলের পুনর্মূল্যায়ন করেছেন৷ অর্থাৎ প্যানেলের নীচের দিকে থাকা প্রার্থীদের উপরের দিকে নিয়ে আসা হয়েছে৷ এমনকী যাঁরা পরীক্ষাতেই বসেননি তাঁদের প্যানেলে স্থান করে দেওয়া হয়েছে৷ পরবর্তীতে তাঁরা সুপারিশ পত্র এবং নিয়োগ পত্র দুইই পেয়েছেন৷ 

এছাড়াও শর্মিলা মিত্র, চৈতালি ভট্টাচার্য, শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মহুয়া বিশ্বাস, শেখ সিরাজউদ্দিন এবং সুবীরেশ ভট্টাচার্য কমিশনের নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ করেছেন বলে জানিয়েছে কমিটি৷ তাঁদের বিরুদ্ধেও শৃঙ্খলাভঙ্গের আভিযোগ আনা হয়েছে৷ রঞ্জিত বাগ কমিটির রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, প্যানেল প্রকাশের পরেও কোথায় কত শূন্যপদ রয়েছে, সেই তথ্য বেআইনি ভাবে নিয়েছেন শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং সৌমিত্র সরকার৷ ভুয়ো সুপারিশপত্র ও নিয়োগপত্র তৈরির ক্ষেত্রে তারা সেটা ব্যবহার করেছেন৷ জাল সুপারিশপত্র ছাপানোর অভিযোগে ভারতীয় ফৌজদারি দন্ডবিধির ৪১৭, ৪৬৫, ৪৬৮ এবং ৩৪ নম্বর ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা যেতে পারে বলেও সুপারিশ করা হয়েছে৷ পাশাপাশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে ১২০ বি ধারায় এফআইআর করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ 

এ প্রসঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘এস এস সি-তে ৩৮১ জনকে ভুয়ো নিয়োগ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২২২ জন পরীক্ষাই দেননি। বাকিরা পাশ করেনি। নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করল বাগ কমিটি। রিপোর্টে প্রকাশ সর্বোচ্চ স্তরের আধিকারিক এবং প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীও জড়িত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শিক্ষাক্ষেত্রে এই চূড়ান্ত দুর্নীতি আমাদের চরম লজ্জার। কোনভাবেই তা বরদাস্ত করা যায় না। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের অবিলম্বে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।’’