কাবুল: আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করেছে তালিবান। দীর্ঘ টালবাহানার পর প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের সরকার গঠিত হয়েছে ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তানে। মন্ত্রিসভায় রয়েছেন মোল্লা ইয়াকুব, সিরাজ হাক্কানি, শেখ মহম্মদ-সহ একাধিক মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি নেতা। নতুন তালেবান সরকারে নেতৃত্ব রয়েছেন কারা? দেখে নেওয়া যাক তাদের পরিচয়-
হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা: ২০১৬ সালের মে মাস থেকে তালেবানের ‘সুপ্রিম লিডার’ পদে আছেন হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। তালেবান ঘোষিত ‘ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তান’-এর শীর্ষ নেতা তিনি। ৮০ দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। তবে সামরিক কমান্ডারের তুলনায় একজন ধর্মীয় নেতা হিসাবেই তার পরিচিতি বেশি। যে শরিয়া আইনকে নিয়ে বিচলিত গোটা বিশ্ব, নব্বইয়ের দশকে সেই শরিয়া আদালতের প্রধানের হ দায়িত্ব পালন করেছেন আখুন্দজাদা। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান জুড়ে নিজেদের মতো করে ধর্মীয় আইনকানুন চালু করে তালিবান। যার মধ্যে- হত্যাকারী ও ব্যভিচারীদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চোরদের হাত কেটে ফেলার নিদান। টেলিভিশন, সংগীত, চলচ্চিত্র নারীদের মেকআপ বা রূপসজ্জার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি।
১০ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের স্কুলে যাওয়াও নিষিদ্ধ: করে তালিবান। তালেবানের সুপ্রিম লিডার হিসাবে তিনি রাজনৈতিক, সামরিক এবং ধর্মীয় সব বিষয়ের শীর্ষ নেতার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। ১৯৯৪ সালে যে চারজন আফগানিস্তানে তালিবানকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, মোল্লাহ মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ তাদের একজন।
প্রধানমন্ত্রী: মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ- তালিবান নেতাদের কাউন্সিল বা রেহবারি শুরার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। ১৯৯৬-২০০১ সাল, অর্থাৎ তালিবানের প্রথম দফার শাসনকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এই তালিব নেতার উপর। তালিবান গোষ্ঠীর আরেক শীর্ষ নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানি। এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর। তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকায় রয়েছেন তিনি৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: সিরাজুদ্দিন হাক্কানি- পিতা জালালুদ্দিন হাক্কানির মৃত্যুর পর হাক্কানি নেটওয়ার্কের নতুন নেতা হন সিরাজুদ্দিন হাক্কানি। আফগানিস্তানে আফগান বাহিনী এবং তাদের পশ্চিমা মিত্রদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু হামলার জন্য দায়ী করা হয় এই জঙ্গিনেতাকে। হাক্কানি নেটওয়ার্ক হচ্ছে ওই এলাকার সবচেয়ে শক্তিশালী জঙ্গি গোষ্ঠী। যুক্তরাষ্ট্রের নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা এই জঙ্গি গোষ্ঠী আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে তালিবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদের তত্ত্বাবধান করে থাকে। দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন আবদুল গনি বরাদার।
উপ-প্রধানমন্ত্রী: আবদুল গনি বারাদার- তালিবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা একজন সদস্য হলেন বরাদর। ২০০১ সালে, যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর অভিযানে তালিবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গোষ্ঠীর প্রধান ব্যক্তিতে পরিণত হন তিনি। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান যৌথ অভিযানে করাচি থেকে গ্রেফতার হন। ৮ বছর তিনি জেলে কাটান।
দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুর পর মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে। শর্ত ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালিবানের শান্তি আলোচনায় সদর্থক ভূমিকা নেবেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে কাতারের দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন বরাদর। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার বিষয়ে দোহা চুক্তিতে তালিবানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তিনি।
আফগানিস্তানে দ্বিতীয় দফার তালিবান শাসন শুরু আগে, মনে করা হচ্ছিল নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন এই জঙ্গি নেতা। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে তাঁকে। বরাদার ছাড়াও এই অন্তর্বর্তী সরকারে আরও একজন উপ-প্রধানমন্ত্রী আছেন। তিনি হলেন মৌলভি আবদুল সালাম হানাফি। দেশের প্রতিরক্ষার ভার দেওয়া হয়েছে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লাহ ওমরের ছেলে মোহাম্মদ ইয়াকুবকে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী: মোহাম্মদ ইয়াকুব- বর্তমানে দলের সামরিক শাখার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ ইয়াকুব। ২০১৬ সালে তালিবান নেতা আখতার মনসুর মারা যাওয়ার পর তালিবানের একটি অংশ ইয়াকুবকে সুপ্রিম লিডার হিসাবে মনোনীত করতে চান। কিন্তু, তাঁর বয়স এবং অভিজ্ঞতা কম হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও নব গঠিত তালিবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আরও রয়েছেন-
পররাষ্ট্রমন্ত্রী- মৌলভী আমির খান মুত্তাকি
অর্থমন্ত্রী- মোল্লা হিদায়াত বদ্রী
বিচারমন্ত্রী-আবদুল হাকিম ইশাকজী
তথ্যমন্ত্রী-খাইরুল্লাহ সাইদউয়ালি খয়েরখা
প্রত্যাশা মতোই মন্ত্রীসভায় নেই কোন নারী প্রতিনিধি। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তালিবানের সংস্কৃতি বিষয়ক কমিশনের প্রধান আমানুল্লাহ ওয়াসিক জানিয়েছেন, মন্ত্রীসভার গঠন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। যদিও কাবুল দখলের পর একাধিকবার সমাজে নারীদের ভূমিকা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালিবান। কিন্তু সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেনি।