অশোকনগর: গত সোমবার থেকে বাবার কোনো খোঁজ নেই। শেষবার যখন কথা হয়েছিল তখন বাবা জানিয়েছিলেন সান্দাকফুর এক জঙ্গলে ঢুকে তিনি রাস্তা হারিয়েছেন। শত চেষ্টার পরেও বাইরে বেরোনোর পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। বাবার সঙ্গে সেই শেষ কথা। তারপর থেকে ক্রমাগত বন্ধ আসছে বাবার ফোন। অন্যদিকে ট্যুর শেষ করেই মেয়ের সঙ্গে মাধ্যমিকের রেজাল্ট আনতে যাওয়ার কথা ছিল অশোকনগরের বাসিন্দা দীপেশ সাহার। কিন্তু তার আগে খুরতে গিয়েই বিপদ। আর তাই বাবার কোনো খোঁজ না পেয়ে মাধ্যমিক পাস করা সত্বেও স্কুলে গিয়ে মাধ্যমিকের রেজাল্টই নিল না নিখোঁজ দীপেশ সাহার মেয়ে অস্মিতা সাহা।
শুক্রবার সকালেই ফলপ্রকাশ হয়েছে এই বছরের মাধ্যমিকের। রাজ্যের কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থীর মত দীপেশ সাহার মেয়েও এই বছর বসেছিল মাধ্যমিক পরীক্ষায়। পড়াশোনায় বরাবরই ভাল অস্মিতা। ফলে বাড়ির সকলের আশা করেছিলেন যে পরীক্ষার ফলাফল মোটামুটি ভালই হবে। তবে মেয়ের পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে সবথেকে বেশি উচ্ছাস এবং উৎসাহ ছিল বাবার। অথচ সেই বাবাই রেজাল্টের দিন অনুপস্থিত। তিনি কোথায় কি অবস্থায় আছেন কিছুই জানেন না পরিবারের সদস্যরা। আর তাই মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করা সত্ত্বেও বাবার অনুপস্থিতিতে পরিবারের কারোর মুখেই হাসি নেই।
পরিবার সূত্রে খবর অশোকনগরের আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী অস্মিতা। সংসারে অভাব-অনটন থাকলেও পড়াশোনায় বরাবরই খুবই ভালো অস্মিতা। আর তাই মেয়ের পড়াশোনায় কোথাও কোনো ত্রুটি রাখেননি দীপেশ বাবু এবং তার স্ত্রী। কলা ও বিজ্ঞান বিভাগের পাশাপাশি ইংরেজি, অঙ্কের জন্যও আলাদা আলাদা টিউশন ছিল অস্মিতার। মেয়ের মাধ্যমিকের ফলাফল যাতে ভালো হয় তার জন্য সব দিক দিয়েই ব্যবস্থা করেছিলেন বাবা। তাদের সেই চেষ্টা বিফলে যায়নি। মাধ্যমিকে ভালো ফল করেছে অস্মিতা। কিন্তু যার জন্য এই ভালো ফলাফল, যার চেষ্টাতেই মেয়ে হাসিমুখে পার করল জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা, সেই দীপেশই আজকের এই বিশেষ দিনে পরিবারের পাশে নেই। আর তাই মাধ্যমিকে আশানুরূপ ফলের পরেও পাবার জন্যই হাপুস নয়নে কেঁদে চলেছে অস্মিতা।
জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই দীপেশ সাহার স্ত্রী স্বপ্না সাহা উত্তরবঙ্গ পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অশোকনগর থানার পুলিস আধিকারিকের সঙ্গে এব্যাপারে তার কথাও হয়ে গিয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই উত্তরবঙ্গে গিয়ে তিনি নিজেই স্বামীকে খুঁজে বের করার কাজ শুরু করবেন।
উল্লেখ্য ট্যুর ব্যবসায়ী দীপেশ সাহা গত ২৪ এপ্রিল ১৮ জনের একটি দলকে নিয়ে সান্দাকফু পাড়ি দিয়েছিলেন। প্রথমদিকে সমস্ত কিছু ঠিক ঠাক থাকলেও গত ২৮ এপ্রিল সান্দাকফুর এক পাহাড়ি জঙ্গলে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। দীপেশের সঙ্গেই বাবাই নামের অপর এক কিশোরও নিখোঁজ। শেষবার পরিবারের সদস্যদের ফোন করে দীপেশ বাবু জানিয়েছিলেন যে তিনি একটি জঙ্গলের মধ্যে থেকে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না। তারপর থেকে আর কোন খোঁজখবর নেই। ইতিমধ্যেই স্থানীয় বিধায়কের সাহায্যে দার্জিলিং, কালিম্পংয়ের পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে দীপেশ এবং বাবাইয়ের খোঁজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাদের কাউকেই খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।