প্রেমিকের টানে মুদূর মেক্সিকো থেকে হাওড়ায়, জুলাইয়েই বাঁধা পড়বেন সাতপাকে

প্রেমিকের টানে মুদূর মেক্সিকো থেকে হাওড়ায়, জুলাইয়েই বাঁধা পড়বেন সাতপাকে

কলকাতা:  লকডাউনে তখন স্তব্ধ গোটা দুনিয়া৷ কোভিড রুখতে ঘরবন্দি আমআদমির জীবন। কিন্তু চারদেওয়ালে বন্দি থাকেনি ওঁদের মন। সমস্ত সীমারেখা ভেঙে সকলের অলক্ষেই ঘটে গিয়েছে দুটি মনের মেল বন্ধন৷ ক্রমেই গাঢ় হয়েছে উভয়ের প্রেম৷ সেই প্রেমের টানেই সুদূর মেক্সিকে থেকে হাওড়ায় ছুটে এলেন প্রেমিকা৷ জুলাই মাসেই সাতপাকে বাধা পড়বেন তাঁরা৷ 

আরও পড়ুন- অসুস্থ স্বামীর দেখভাল, পরিচারিকার কাজ করেই উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই পঞ্চায়েত প্রধান

মেক্সিকোর লেসলি দেলগাডোর সঙ্গে হাওড়ার বাসিন্দা অরিজিৎ ভট্টাচার্যের আলাপ হয়েছিল অনলাইন ডেটিং অ্যাপে। সময়টা ২০২০-এর এপ্রিল৷ করোনার বাড়বাড়ন্ত রুখতে তখন দেশ বিদেশে দীর্ঘ লকডাউন৷ প্রায় থমকে গোটা বিশ্ব। তবে সেই স্তব্ধতা ভেঙে খড়স্রোতের মতো দুর্নিবার গতিতে এগিয়ে চলে অরিজিৎ-লেসলির প্রেম। হাওড়ার বালির দুর্গাপুর সাহেববাগান এলাকার বাসিন্দা অরিজিতের কথায়, ‘‘বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসে বাড়িতে আটকে পড়েছিলাম৷ ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মস্থলে ফিরতে পারিনি৷ বাড়িতে বসেই কাজ করতাম৷ সেই সময় নেহাতই সময় কাটানোর জন্য ডেটিং অ্যাপ ইনস্টল করি৷ সেখানেই লেসলির সঙ্গে আলাপ৷ প্রথমে টুকটাক কথা হত৷ ধীরে ধীরে সেই আলপই গভীর সম্পর্কে পরিণত হয়৷’’ রসিকতা করেই তিনি বলেন, ‘‘করোনা না এলে তো হয়তো আমাদের আলাপও হত না!’’

গত দু’বছর চুটিয়ে প্রেম করেছেন অভিজিৎ-লেসলি৷ কিন্তু সমনাসামনি দেখা হয়নি তাঁদের৷ বাধ সেধেছিল সেই করোনা৷ আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ থাকায় সোশ্যাল মিডিয়াই ছিল তাঁদের দেখাসাক্ষাতের একমাত্র মাধ্যম৷ তবে নিষেধাজ্ঞা উঠতেই সুদূর মেক্সিকো থেকে হাওড়ায় উড়ে আসেন লেসলি। অরিজিৎ বলেন, ‘‘পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তা বলেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ ১৯ জুন আমাদের রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়েছে। আগামী ৫ জুলাই সামাজিক ভাবে বিয়ে হবে আমাদের৷’’ তিনি জানান, দুই পরিবারই খুব ভালোভাবে তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে৷ 

ছেলের বিয়ে নিয়ে উচ্ছ্বসিত অভিজিতের বাবা বিনায়ক ভট্টাচার্যও৷ অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী বিনায়ক বলেন, ‘‘লেসলি খুব ভাল মেয়ে। সবাইকে আপন করে নিয়েছে। আমাদের সঙ্গে ভাল ভাবে কথা বলার জন্য ধীরে ধীরে বাংলা আর ইংরেজি শিখছে। আর লেসলির সঙ্গে কথা বলার জন্য স্প্যানিশ ভাষা শিখেছে অরিজিৎ।’’ তিনি বলেন, ‘‘কোথাও গেলে লেসলি বলে যায় ‘আমরা আসছি’৷ আবার এসে বলে, ‘আমরা এসে গিয়েছি’৷ কিন্তু এর বাইরে এখনও কিছু শেখা হয়ে ওঠেনি তাঁর৷ কিছুটা সময় লাগবে ওঁর৷ তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হবু বৌমা৷’’ 

জানা গিয়েছে, অক্টোবর পর্যন্ত হাওড়াতেই থাকবেন অরিজিৎ এবং লেসলি। এর পর তাঁরা উড়ে যাবেন মেক্সিকো৷ সেখানে আরও একবার সামাজিক অনুষ্ঠানে বিয়ে হবে তাঁদের। লেসলি বলেন, ‘‘ভাবিনি এমনটা হবে৷ কিন্তু এমনটা হয়ে গেল৷ আমাদের বিয়ে নিয়ে খুবই উত্তেজিত৷’’