ব্রিটিশের চোখ-রাঙানি উড়িয়ে শতবর্ষে ‘আনন্দবাজার’! কুর্নিশ ‘আজ বিকেল’-এর!

ব্রিটিশের চোখ-রাঙানি উড়িয়ে শতবর্ষে ‘আনন্দবাজার’! কুর্নিশ ‘আজ বিকেল’-এর!

de6b159061f4f6d36f83ee3c0b270617

কলকাতা: পায়ে পায়ে একশো। সেই কোন সুদূর অতীত থেকে পথ চলা শুরু হয়েছিল। ছোট্ট একফালি ঘরে কিছু মানুষের নিরলস পরিশ্রম আর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এগোতে থাকা। ইংরেজ আমলে চক্ষুশূল হতে হয়েছে কাগজকে। কিন্তু চাপের কাছে মাথা না নুইয়ে আরও বেশি করে জাতীয়তাবাদি আন্দোলনে সামিল হওয়া। কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা লাভের পরেও থেমে থাকেনি তারা। দেশ গড়ার লক্ষ্যে শুরু হওয়া প্রতিটি ক্ষণে তাদের নজরদারিও ছিল৷ মানুষের জন্যই মানুষের কাছে খবর পৌঁছে দেওয়া জরুরি। প্রতিক্ষণে সেই কথাই তারা স্থির চিত্তে ভেবে গিয়েছে। আর সেখানেই তাদের জয়যাত্রা।

পায়ে পায়ে শতবর্ষে আনন্দবাজার পত্রিকা। ১৯২২ সালের ১৩ মার্চ দোল পূর্ণিমার দিনে সান্ধ্য দৈনিক হিসেবে শুরু হয় আনন্দবাজার পত্রিকা। চার পাতার সেই সান্ধ্য দৈনিকের দাম ছিল দুই পয়সা। কাগজের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন প্রফুল্লকুমার সরকার। পরিচালকের ভূমিকায় ছিলেন সুরেশচন্দ্র মজুমদার। ১৯১৪ সালে সুরেশচন্দ্র মজুমদার ৭১/১, মির্জাপুর স্ট্রিটে শ্রীগৌরাঙ্গ প্রেস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখান থেকেই ছাপার পর যাত্রা শুরু হয় আনন্দবাজারের। প্রফুল্লকুমার সরকার লিখেছিলেন, ইহা কেবল ছাপাখানা নহে, বাংলার দেশভক্তদের মিলনক্ষেত্র।

একশো বছরের ইতিহাসে বহু দিকপাল মানুষ আনন্দবাজার পত্রিকার দায়িত্ব সামলেছেন।  সাংবাদিক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় থেকে অশোককুমার সরকার তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। ব্রিটিশ রাজত্বে ১৯ বার রাজরোষের কোপে পড়তে হয়েছিল আনন্দবাজারকে। সম্পাদকের জেল থেকে জরিমানাও হয়েছে। কাগজ বন্ধের ফরমানও জারি করা হয়েছিল। কিন্তু কখনওই আনন্দবাজারকে দমিয়ে রাখা যায়নি।

প্রকাশের প্রথম দিন এক হাজার কাগজ বিক্রি হয়েছিল বলে খবর। পাতিরাম পাতিজা প্রথম দিন থেকেই এই কাগজ বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তাকে এই দায়িত্ব স্বয়ং দিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। প্রথমে কাগজে সম্পাদক ও প্রকাশকের নাম ছাপা হত না। ১৯২২ সালের এপ্রিল মাসে প্রেস আইন সংশোধন করা হয়। ১ জুনের কাগজে প্রথম সম্পাদক হিসেবে নাম ছাপা হয় প্রফুল্লকুমার সরকারের।

লাল কালিতে প্রথম দিন আনন্দবাজার পত্রিকা ছাপা হয়েছিল। সেইসময় ব্রিটিশরা লাল কালিকে বিপদজ্জনক বলে মনে করত। সেজন্য এই পত্রিকাকেও  কড়া নজরে রেখেছিল ব্রিটিশরা। কিন্তু আনন্দবাজার শুরু থেকেই ঘোষণা করেছিল জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা সংগ্রাম তাদের পাথেয়। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারাও সমানভাবে আছে। ১৯২৩ সালের ১ জুন আনন্দবাজার সান্ধ্য থেকে প্রভাতী সংবাদপত্র হয়। পাতার সংখ্যা চার থেকে বাড়িয়ে ছয় করা হয়েছিল। দোলের দিন আটপাতার কাগজ করা হয়েছিল।

প্রাদেশিক ভাষার সংবাদপত্র সেইসময় খুব একটা প্রসারতা পায়নি। আনন্দবাজার সেই জায়গা জয় করল। ইংরাজি পত্রিকা হিসেবে সেইসময় ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষে দ্য স্টেটসম্যান চলছে। বলা ভালো, এই কাগজ ইংরাজশক্তির মুখ হিসেবে সেইসময় কথা বলছে। সেই কাগজের সঙ্গে সমানে টক্কর দিতে শুরু করেছিল প্রাদেশিক সংবাদপত্র আনন্দবাজার।

শুরুর দিন থেকে সপ্তাহে একদিন সংবাদপত্র অফিসে ছুটি থাকত। অর্থাৎ মাসে চারদিন কাগজ প্রকাশিত হত না। ১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সেই ছুটি বাতিল হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে এবার থেকে দৈনিক সংবাদপত্র হয়ে উঠল আনন্দবাজার।

এই কাগজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির বহু বিশিষ্ট সাংবাদিকদের নাম। তাদের মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, সন্তোষকুমার ঘোষ, অধীপ সরকার, কানাইলাল সরকার, সাগরময় ঘোষ৷ সুধাংশু বসু, গৌরকিশোর ঘোষ, বরুণ সেনগুপ্ত, রণজিৎ রায়, বীরেন্দ্রনাথ সিংহ, শক্তিদাস রায়ের নাম অবশ্যই করতে হয়। সংবাদপত্রের কাজ একটি দলগত প্রচেষ্টা, এই কথা প্রমাণ করে দিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

একশো বছরের ইতিহাসে আনন্দবাজার অনেকাংশেই খবরের দুনিয়ার পথপ্রদর্শক। শতবর্ষে আজ বিকেলের তরফ থেকে আনন্দবাজারকে কুর্নিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *