নেই দুই পা, হাঁটুর ভরসায় জীবনের দুই বড় পরীক্ষায় সফল দেবশ্রী!

নেই দুই পা, হাঁটুর ভরসায় জীবনের দুই বড় পরীক্ষায় সফল দেবশ্রী!

আগরতলা:  দম্য ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করে মানুষ কিনা করতে পারে! এভারেস্ট জয় থেকে শুরু করে চাঁদে পাড়ি কিংবা জীবনযুদ্ধে সফলতা। দুর্গম পথ অতিক্রম করতে মানুষকে পাড়ি দিতে হয় কতই না চড়াই উৎরাই। যা করতে প্রয়োজন শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তির।

আর এই ইচ্ছাশক্তিকে হাতিয়ার করেই জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলেছেন দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা বিলোনিয়া এলাকার দেবশ্রী পাটারী। বিশেষভাবে সক্ষম তিনি। তবুও হার মানেননি জীবনযুদ্ধে। অদম্য ইচ্ছা এবং মনোবলকে হাতিয়ার করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন দিব্যাঙ্গনা দেবশ্রী। এখন তিনি কলেজে পাঠরতা। দেবশ্রীর একটাই স্বপ্ন, তিনি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চান। তাঁর লক্ষ্য, সরকারি চাকরি।

ছোটবেলায় বাবা-মা সহ দুই পিসির কোলেপিঠে চড়ে মানুষ হয়েছেন দেবশ্রী। পা দিয়ে নয়, হাঁটু দিয়ে দাঁড়াতে শিখেছিলেন ছোট্ট দেবশ্রী। এরপর হামাগুড়ি দিয়ে শুরু হয় দেবশ্রীর জীবনযুদ্ধ। ধীরে ধীরে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা বিলোনিয়া মহকুমার ঋষ্যমুখ ব্লকের অধীনে দেবীপুর এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে বাবা, মা, পিসির কোলে ভর করে স্কুলের যাত্রা শুরু দেবশ্রীর। তবে দেবশ্রীর স্কুলযাত্রা অতটা সহজ ছিল না। নানান বিদ্রূপদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল দেবশ্রীকে। সেই সমস্ত প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে আজ দেবশ্রী পার করে ফেলেছেন জীবনের দুটি বড় পরীক্ষা। 

জানা যায়, একটা সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ভর্তি নিতে চাননি দেবশ্রীকে। এমনটাই অভিযোগ করেন দেবশ্রীর মা-বাবা। যদিও নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ওদের পরিবারের মনোবল ভাঙতে পারেননি কেউই। অঙ্গনওয়াড়ি থেকে স্কুলযাত্রা, সেখান থেকে মাধ্যমিকের লড়াই, উচ্চমাধ্যমিকের যুদ্ধে জয়ী হয়ে, বিলোনিয়া ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয়ে প্রবেশ দেবশ্রীর। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে উঁচু টিলার উপরে বাড়ির কর্দমাক্ত পথ, কিংবা প্রখর রৌদ্রের উত্তপ্ত কালো রঙের পিচের রাস্তা কখনও আটকে রাখতে পারেনি ঘামে ভিজে যাওয়া হামাগুড়ি দেওয়া কলেজপড়ুয়া দেবশ্রীকে।

১৯৬১ সাল থেকে ঋষ্যমুখ দেবীপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়ি থাকার ফলে গাড়িতে যাতায়াত করার মত সুযোগ মেলেনি দেবশ্রীর কপালে। এর ফলে বিলোনিয়া কলেজে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় হাঁটুর ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মূল সড়কে পৌঁছে গাড়িতে চাপতে হয় দেবশ্রীকে। এখানেই শেষ নয়। এরপর বিলোনিয়া এসে সাড়াসীমা বাজার এলাকায় নেমে হামাগুড়ি দিয়ে কলেজের উদ্দেশে পথচলা।  হামাগুড়ি দিয়েই প্রখর রৌদ্রে বিলোনিয়া মহাবিদ্যালয় যেতে হয়। এই দুর্গম পথ অতিক্রম করতে গিয়ে কখনও ভেঙে পড়েননি দেবশ্রী।

দেবশ্রীর এখন শুধু একটাই চাওয়া। বাড়ি থেকে কলেজ যাতায়াতের জন্য একটি বিশেষ যানের প্রয়োজন তার। তা পেলে আর তাঁর কোনও অসুবিধা থাকবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও এবিষয়ে  দেবশ্রী ত্রিপুরা দক্ষিণ জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এখন দেখার যাতায়াতের সুবিধার্থে দেবশ্রীর এই কঠিন সমস্যা নিরসনের জন্য কতটুকু ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন।