কলকাতা: এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মমলায় চাঞ্চল্যকর মোড়৷ শুক্রবার সকাল থেকে বেনজির তল্লাশি চালিয়ে টাকার পাহাড় খুঁজে পায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে টানা ২৭ ঘণ্টা মেরাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমান শিল্পমন্ত্রী) পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ এই ঘটনা গোটা দেশে শোরগোল ফেলে দিয়েছে৷
শনিবার সকালে গ্রেফতারের পরই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জোকা ইএসআই হাসপাতালে৷ পরে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাঁকে এসএসকেএম-এ ভর্তি করার নির্দেশ দেয় নিম্ন আদালত৷ কিন্তু ইডি এই নির্দেশের তীব্র প্রতিবাদ জানায়৷ শনিবার রাতেই কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের কাছে দ্রুত শুনানির আর্জি জানায়। ইডি আধিকারিকদের দাবি, এসএসকেএম তাঁদের কোনও রকম সহায়তা করছে না। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে এই হাসপাতাল৷ এর পরেই শারীরিক পরীক্ষার জন্য পার্থকে ভুবনেশ্বর এইমসে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি৷ সোমবার সকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে ভুবনেশ্বর নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে৷
আরও পড়ুন- বিকট শব্দে কেঁপে উঠল বহরমপুর থানা, আহত তিন পুলিশকর্মী
বিচারপতির নির্দেশে, এইমস ভুবনেশ্বরে কার্ডিয়োলজি, মেডিসিন, নেফ্রোলজি, এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা পার্থের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য নির্দিষ্ট দল তৈরি করবেন। পার্থ হাসপাতালে পৌঁছলেই শুরু হয় পরীক্ষা৷ আজ দুপুর ৩টের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে তাঁদের৷ আদালতের নির্দেশ মতোই আজ সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে দমদম বিমানবন্দর থেকে পার্থকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে রওনা দেয় ইডি৷ ১০টা নাগাদ ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে পৌঁছন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। স্থলপথে অ্যাম্বুল্যান্সে রওনা দিয়ে কলকাতা থেকে ওড়িশা পৌঁছতে ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যেত৷ সময় বাঁচাতে আকাশ পথকেই বেছে নেওয়া হয়৷ মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে ওড়িশা পৌঁছে যান পার্থ৷ সাধারণত কোনও অসুস্থ ব্যক্তিকে দূরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ কী কী সুবিধা থাকে এই ধরনের অ্যাম্বুল্যান্সে? এর খরচই বা কত?
এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে অসুস্থ ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকে৷ যাত্রা পথে বিপদ এড়াতে প্রতিটি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে রয়েছে আপদকালীন চিকিৎসার ব্যবস্থা৷ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে এক ঘণ্টার মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছতে আনুমানিক খরচ হয় এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা থেকে দু’লক্ষ টাকা৷ যদিও খরচের পরিমাণ নির্ভর করে দূরত্ব, অ্যাম্বুল্যান্সের ধরন, যাত্রার সময় কোনও আপদকালীন পরিষেবা দেওয়া হয়েছে কি না, এই সব কিছুর উপর।
সাধারণত, দুই ধরনের এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে৷ একটি হল টার্বো-পপ রেসকিউ প্লেন এবং অপরটি জেট এয়ারক্রাফ্ট। সাধারণত কম দূরত্বের জন্য ব্যবহার করা হয় টার্বো-পপ রেসকিউ প্লেন৷ এই ধরনের বিমানে থাকে ‘রোটারি উইঙ্গ’৷ জেট এয়ারক্রাফ্টের তুলনায় এর খরচ যেমন কম, তেমনই খুব ছোট জায়গাতেও সহজে অবতরণ করতে পারে এই বিমান৷ টার্বো পপ-এর থেকে জেট এয়ারক্রাফ্ট আকারে তুলনামূলক ভাবে বড়। রোটারি উইঙ্গের পরিবর্তে এই বিমানে থাকে ফিক্সড উইঙ্গ৷ যে কোনও আবহাওয়ার মধ্যেই উড়ান দিতে পারে এই বিমান৷ ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ভারতের হাতে মোট ৪৯টি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। ১৯টি সংস্থার মাধ্যমে এই অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা পরিচালিত হয়।
সোমবার বৃষ্টিভেজা সকালে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করেই ভুবনেশ্বর পৌঁছন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তবে এদিনও কোনও কথা বলেননি তিনি৷ কেমন আছেন দাদা? সাংবাদিকদের প্রশ্ন শুনে ঘাড় নেড়ে শুধু আলতো ভাবে বুকে হাত রাখলেন। যেন ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন, শরীরটা ভাল নেই।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>