কলকাতা: এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে ইডির হস্তক্ষেপে কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়েছে কেউটে। সামনে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সৌজন্যে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ‘অপা’ জুটি। মাত্র ছয় দিনের মধ্যেই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি অভিজত ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা, সোনার বাট এবং সোনার গয়না। এছাড়াও জেলায় জেলায় মিলছে একাধিক বাগানবাড়ি, ‘বিশ্রামাগার’, জমি ও ফ্ল্যাটের হদিশ। সবে মিলে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পত্তির শেষ যে কোথায় তার হিসাব গুলিয়ে ফেলছেন ইডি আধিকারিকরাই। কিন্তু রাজ্য এবং শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যার নামে মিলছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে আদতেই নাকি কিছু নেই। এমনটাই বলছে তাঁর ভোটের হলফনামা। জানা যাচ্ছে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনের কাছে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন তাতে নগদ মাত্র এক লক্ষ টাকা এবং নাকতলার পৈত্রিক বাড়ি ছাড়া আর তেমন ভাবে কোনো সম্পত্তির কথাই তিনি উল্লেখ করেননি। এমনকি ওই হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নিজস্ব একটি গাড়িও নাকি নেই।
২০২১-এ বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রে দাঁড়ানো তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা পার্থ নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় জানিয়েছিলেন, তাঁর হাতে নগদ রয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৬ টাকা। একই সঙ্গে স্থায়ী আমানত এবং সেভিংস অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে দু’টি ব্যাঙ্কের ৪টি শাখায় তাঁর রয়েছে যথাক্রমে ২৪ লক্ষ ৮১ হাজার, ২৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৯৩৫ টাকা, ১৫ লক্ষ ১ হাজার ১৬১ টাকা এবং ১ লক্ষ ৮ হাজার ৬৯ টাকা। নিজের নামে ২৫ লক্ষ টাকার একটি জীবনবিমা করা রয়েছে বলেও পার্থ হলফনামায় জানিয়েছিলেন। জীবনবিমা, ব্যাঙ্কের আমানত মিলিয়ে তাঁর সঞ্চিত অর্থ ৯০ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬৩ টাকা! পার্থ জানিয়েছিলেন, পারিবারিক সূত্রে তাঁর একটি বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ি নাকতলায়। নাম ‘বিজয়কেতন’। ঘটনাচক্রে, গত শনিবার ওই বাড়ি থেকেই ইডির হাতে গ্রেফতার হন পার্থ।
অন্যদিকে ইতিমধ্যেই ইডি আধিকারিকদের ক্রমাগত জেরায় মুখ খুলেছেন পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। বুধবার সূত্র মারফত জানা যায় অর্পিতা ইতিমধ্যেই নাকি ইডি আধিকারিকদের জানিয়েছেন তাঁর বহুতল থেকে যে টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়েছে সেই পুরো টাকাই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি জানতেন যে তাঁর বাড়িতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় টাকা রাখেন কিন্তু কত পরিমান টাকা রয়েছে তা তাঁর জানা ছিল না। সঙ্গে অর্পিতা এও জানিয়েছেন, তাঁর ফ্ল্যাটের যে ঘরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় টাকা রাখতেন সেই ঘরে প্রবেশের অধিকার ছিল না অর্পিতার। পার্থ এবং তাঁর সঙ্গী সাথীরাই সেই ঘরে ঢুকতেন এবং টাকা রেখে বেরিয়ে এসে বাইরে থেকে দরজা লক করে দিতেন।