আমার নামে সম্পত্তি হলেও ‘আই অ্যাম পেড স্টাফ, অ্যান্ড অলসো আ কেয়ারটেকার’, অর্পিতা

আমার নামে সম্পত্তি হলেও ‘আই অ্যাম পেড স্টাফ, অ্যান্ড অলসো আ কেয়ারটেকার’, অর্পিতা

1dc94cdf7119c60f91aec425df4a246f

কলকাতা: এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর দফতরে টেলিভিশন সেটে তখন দেখানো হচ্ছে টাকার পাহাড়৷ ইডি-র দফতরে বসে সেই ছবি দেখতে দেখতে ভেঙে পড়লেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘বান্ধবী’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। সেখানে তখন উপস্থিত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীও৷ 

আরও পড়ুন- ED হেফাজত থেকে পার্থ–অর্পিতা ঠাঁই হতে চলেছে আলিপুর–প্রেসিডেন্সি জেলে!‌ শুরু তোড়জোড়

ইডি সূত্রের দাবি, টিভির পর্দায় থরে থরে সাজানো নোটের বান্ডিল দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন অর্পিতা৷ পার্থের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ‘‘স্যর! এত টাকা আমার বাড়িতে রাখা হয়েছিল?’’ এর পরেই ইডি-র অফিসারদের উদ্দেশে তিনি বলে ওঠেন, ‘‘বিশ্বাস করুন। ফ্ল্যাটে যে এত টাকা রাখা হয়েছিল আমি তা জানতাম না।’’ ইডি সূত্রে দাবি, অর্পিতাকে প্রাথমিক জেরার পর জানা গিয়েছে, তাঁর টালিগঞ্জ ও বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে টাকা নিয়ে যেতেন পার্থর প্রতিনিধিরা। সেই টাকা যে ঘরে রাখা হয়, সেখানে প্রবেশাধিকার ছিল না অর্পিতার৷ 

ইডি সূত্রের আরও জানা গিয়েছে, বুধবার টিভিতে বিপুল ধনরাশির ছবি দেখার পর অর্পিতার দাবি, ‘‘এর মধ্যে (বাজেয়াপ্ত হওয়া টাকা) একটা টাকাতেও হাত দেওয়ার অধিকার আমার ছিল না আমার। হ্যাঁ, গয়নাগুলো আমার আলমারির লকারে রাখা থাকত। কয়েকটা গয়না আমি পরেছি। তবে সেই গয়নাতেও আমার কোনও অধিকার ছিল না।’’ ইডি সূত্রের দাবি,  অর্পিতা যখন একের পর এক দাবি জানিয়ে পার্থর দিকে আঙুল তুলছেন, তখন পার্থ চুপ৷ অর্পিতা এও বলেন, ‘‘স্যর। আমার নামে সম্পত্তি-কোম্পানি সব কেনা রয়েছে। প্র্যাকটিক্যালি আই অ্যাম নট অ্যান ওনার অব দিজ প্রপারটিজ। আই অ্যাম পেড স্টাফ, অ্যান্ড অলসো আ কেয়ারটেকার।’’

এক ইডি অফিসারের কথায়, ‘‘ বিপুল টাকা উদ্ধার হওয়ার পর অর্পিতা এখন যাবতীয় দোষ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপরেই চাপাচ্ছেন। তবে অর্পিতা যে দাবি জানাচ্ছে, সেটাও যাচাই করে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে তিনি এমনটা বলছেন কিনা, সেটা জানা দরকার৷ অর্পিতার বয়ানের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পার্থকে লাগাতার জেরা করা হয়েছে।’’

ইডি সূত্র জানা যাচ্ছে, বুধবার সন্ধ্যা ছ’টা থেকে সিজিও কমপ্লেক্সের কনফারেন্স হলে পার্থ ও অর্পিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়েছে। ওই ঘরেই চলছিল টিভি। তদন্তকারীদের কথায়, তাঁর মায়ের বাড়িতে ইডি-র অফিসারদের দেখার পরেই দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকেন অর্পিতা। কিন্তু বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে যখন ইডি-র অফিসারেরা ভিতরে ঢোকেন, তখন রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে পড়েন তিনি৷ বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে যখন নোট গোনার যন্ত্র নিয়ে ব্যাঙ্কের কর্মীরা পৌঁছন, তখন অর্পিতা চেঁচিয়ে বলে ওঠেন, ‘‘স্যর, ওখানেও অনেক টাকা উদ্ধার হবে। সোনার গয়নাও রয়েছে।’’ এর পরেই ফের দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলন অর্পিতা৷ 

অর্পিতা জানান, বেশ কয়েক বছর আগে টালিগঞ্জের কয়েক জন অভিনেতা বন্ধুর সূত্রেই একটি অনুষ্ঠানে পার্থর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁর। এরপর উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। অভিজাত ডায়মন্ড সিটির ফ্যাটে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ‘মন্ত্রী’ই। ইডি-র সূত্র বলছে,  অর্পিতা জানিয়েছেন এই সকল সম্পত্তি, ফ্ল্যাট এবং তাঁর নামে তৈরি সংস্থা— সবটাই পার্থ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এক হিসেবরক্ষক মারফত করা হয়েছিল। এর জন্য শুধুমাত্র তাঁর প্যান, ভোটার আইডি, আধার কার্ড ও কিছু প্রয়োজনীয় নথি অর্পিতার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল।