NASA
নিউ ইয়র্ক: ভারতীয় সময় অনুযায়ী রাত তখন ৮টা ২২৷ আমেরিকার উটাহতে তখন ভোর৷ মহাশূন্যে থাকা গ্রহাণু থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে নমুনা সংগ্রহ করে উটাহর মরুভূমিতে এসে নামল নাসার মহাকাশযান ‘ওসিরিস রেক্স’। মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বুকে মহাকাশযানের সফর প্রত্যাবর্তনের লাইভ স্ট্রিম করেছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। ‘ওসিরিস-রেক্স’ পৃথিবীর মাটি ছুঁতেই এই অভিযানকে সফল বলে ঘোষণা করে নাসা। এই প্রথম কোনও গ্রহাণু থেকে এত বিপুল পরিমাণে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরল কোনও মহাকাশযান৷
২০১৬ সালে এই মিশন শুরু করেছিল নাসা। সাত বছর পর সেই অভিযান সম্পন্ন হল৷ ‘ওসিরিস-রেক্স’-এর টার্গেট ছিল বেন্নু৷ ওই গ্রহাণুর মধ্যে থাকা ‘খনিজ ভাণ্ডার’ থেকে এক টুকরো পাথুর খুবলে আনার জন্যেই মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল এই মহাকাশযানকে। ২০২০ সালেই সেই কাজটি নির্বিঘ্নে সেরে ফেলেছিল ‘ওসিরিস-রেক্স’। ওই বছর ২০ অক্টোবর বেন্নুতে খোঁড়াখুঁড়ি চালিয়ে প্রচুর পাথর-ধুলোর নমুনা সংগ্রহ করে সে। সেই নমুনা সঙ্গে নিয়েই শুরু হয় তার পৃথিবীতে ফিরে আসার পালা৷ অভিযান শুরুর সাত বছর পরে সফল অবতরণ করল ‘ওসিরিস-রেক্স’। এর আগে জাপানের মহাকাশযান দু’বার গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরে এসেছিল৷ তবে বেন্নু থেকে ওসিরিস এক্স-এর আনা নমুনার তুলনায় তা ছিল খুবই নগন্য।
১৯৯৯ সালে পৃথিবী থেকে ২৯.৩ কোটি কিলোমিটার দূরে থাকা এই গ্রহাণুর সন্ধান মেলে৷ এই গ্রহাণুটির চরিত্র বুঝতে অভিযানে নামে ‘ওসিরিস-রেক্স’৷ বিজ্ঞানীদের অনুমান, আগামী শতাব্দীতে পৃথিবীর উপর আছড়ে পড়তে পারে চলেছে পাঁচটি ফুটবল মাঠের সমান আকারের গ্রহাণু বেন্নু৷ যেটি চওড়ায় এক হাজার ৬০০ ফুট। বা, ৪৯২ মিটার। কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতেই সেটি চলে আসবে আমাদের খুব কাছাকাছি। অত কাছাকাছি চলে আসায় পৃথিবীর অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে অনেকটাই বাঁকেচুরে যাবে গ্রহাণু বেন্নুর কক্ষপথ। তারই জেরে আগামী শতাব্দীর শেষাশেষি খুব জোরে ধেয়ে এসে পৃথিবীর উপর হামলে পড়বে বেন্নু। সেই প্রেক্ষিতে নাসার এই সফল অভিযান মানব সভ্যতার জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ৷
পৃথিবীর সবথেকে কাছে থাকা গ্রহাণু বেন্নুর ব্যাস পাঁচশো মিটার। যা প্রতি ছ’বছরে একবার পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়ে এবং পৃথিবীর কান ঘেঁষে চলে যায়। যা কিনা, ২১৭৫ থেকে ২১৯৬ সালের মধ্যে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে৷ অর্থাৎ প্রায় দেড়শ থেকে পৌনে দু’শো বছর পর পৃথিবীর উপর আঘাত হানতে চলেছে এই গ্রহাণু। মনে করা হয়, এই বেন্নুর জন্যই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছে ডাইনোসর। ফের যদি ও পৃথিবীর উপর আছড়ে পড়ে, তাহলে দেড় হাজার মিটার গভীর ক্ষত সৃষ্টি হবে পৃথিবীর বুকে।
জানা গিয়েছে, বেন্নুর পিঠের কঠিন আবরণ গড়ে উঠেছে কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণুর সাহায্যে। যা প্রাণের উৎসের অন্যতম কারণ। এর বিস্তারিত বিশ্লেষণের জন্যই তার পিঠের অংশ থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছে পাথুরে অংশ। বেন্নুর কক্ষপথে দীর্ঘ চক্কর কাটার পর ২০২০ সালের অক্টোবর এই গ্রহাণুর খুব কাছে পৌঁছে যায় নাসার মহাকাশযান। তারপর গ্রহাণুটির পিঠ ছুঁয়ে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে একটি পোগো স্টিকের সাহায্যে তুলে আনে প্রায় ৬০ গ্রাম নুড়ি-পাথর। সেই নমুনাই এবার হাতে এল বিজ্ঞানীদের।