সুদূর জার্মানি থেকে চুঁচুড়ায় এল বর, ভারতীয় সংস্কৃতিকে সাক্ষী রেখে এক হল চার হাত

সুদূর জার্মানি থেকে চুঁচুড়ায় এল বর, ভারতীয় সংস্কৃতিকে সাক্ষী রেখে এক হল চার হাত

চুঁচুড়া:  দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক তাঁদের৷ বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা, প্রেম৷ আর সব শেষে চার হাত এক হওয়ার পালা৷ সেজন্য হল রাজকীয় আয়োজন৷ প্রেমিকাকে বাহুডোরে বাঁধতে সুদূর জার্মানি থেকে হুগলির চুঁচু়ড়ায় এলেন জার্মানির বর৷    

আরও পড়ুন- চিঠি লিখেছেন, বাংলার ইস্যু নিয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হচ্ছেন সুকান্ত

২০১৪ সালে চুঁচুড়ার পল্লশ্রী থেকে জার্মানি পাড়ি দিয়েছিলেন ত্রিয়া চট্টোপাধ্যায়৷ একটি জায়গায় ইন্টার্নশিপ করতে গিয়ে আলাপ হয় ড্যানিয়েলের সঙ্গে৷ জার্মানিতে থিতু হলেও, বরাবরই ত্রিধার ইচ্ছা ছিল ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ড্যানিয়েলের পরিচয় করানো৷ ভারতীয় সংস্কৃতি মেনে সাত পাকে বাঁধা পড়ার ইচ্ছে ছিল ড্যানিয়েলেরও৷ ত্রিধা চেয়েছিলেন হবু বরকে নিজের জন্মভূমির সঙ্গে পরিচয় করাতে৷ তাই তো জার্মানি থেকে চুঁচুড়ায় উড়ে এলেন তাঁরা৷ 

ত্রিয়া বলেন, ‘‘আমি জার্মানিতে থাকি, ওখানকার সংস্কৃতি কেমন বুঝে গিয়েছি৷ ওঁরা এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে অবগত নয়৷ এখানে এসে প্রথম ওঁরা সাঁওতালি নাচ দেখল৷ আরও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে৷’’ কখনও কি ভেবেছিলেন সুদূর জার্মানি থেকে চুঁচুড়ায় ফিরে সাত পাকে বাঁধা পড়বেন? ত্রিয়ার কথায়, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম৷ ওঁর পরিবারও আগ্রহী ছিল৷ ১৭-১৮ ঘণ্টা সফর করে জার্মানি থেকে সকলে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছেন, সেটা খুবই বড় বিষয়৷’’ 

এদিকে হবু শ্বশুরবাড়ির আতিথেয়তায় মুগ্ধ জার্মানি বর৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথম বার আমার পরিবার ভারতে এসেছে৷ অসাধারণ লাগছে৷ আমরা অভিভূত৷ বাংলার সংস্কৃতি, নাচ, গান সবকিছুই খুব সুন্দর৷ আমি আপ্লুত৷’’ ভারতীয় রীতি মেনে এদিন ড্যানিয়েল সেজেছিলেন লাল পাঞ্জাবীতে৷ শুধু বরই নন, বরযাত্রী সকলেই সেজেছিলেন ভারতীয় পোশাকে৷ ভারতীয় গানের সুরে কোমরও দোলান তাঁরা৷ আনন্দে হৈহৈ করে মিটল তাঁদের বাগদান৷

জার্মানি শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে ভারতীয়  রীতিনীতি ও সংস্কৃতিকে পরিচয় করে দিতেই  বাগদান পর্বে অভিনব অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ত্রিধার পরিবার৷ চুচুঁড়ার কাছেই মহেশপুরের গ্রাম্য পরিবেশে মঙ্গলবার বসেছিল বাগদানের আসর৷ সেখানে লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন আঙ্গিক তুলে ধরা হয়৷ ছিল সাঁওতালী নাচ, আদি অকৃত্রিম ব্রতচারী নৃত্য৷ হবু কনের ইচ্ছেমতো আমনান থেকে এসেছিল সাঁওতালী নাচের দল৷ এসেছিল গান্ধীগ্রামের শিবদুর্গা ব্রতচারী মন্ডলীর সদস্যরা। বাংলার লোকনৃত্য, লোকগীতি মন ছুঁয়ে যায়৷ সুদূর জার্মান থেকে বাংলায় এসে এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিছে একাকার হয়ে যান তাঁরা৷ শুধু কি তাই৷ অনুষ্ঠান বাড়িতে রীতিমতো  লোকশিল্পীদের সঙ্গে নাচে মেতে ওঠেন ড্যানিয়েলের গোটা পরিবাক।