কলকাতা: মা মারা যাওয়ার পর বাবা আবার বিয়ে করে। পরে বাবাও মারা যায়। তাঁর মৃত্যুর পর বাবার চাকরি পান সৎ মা। চাকরি পাওয়ার সময় শর্ত ছিল মৃত স্বামীর পরিবারকে দেখভাল করতে হবে। কিন্তু তা হয়নি। আগের পক্ষের একমাত্র ছেলে সমীর টিংওয়াকে বাড়ির পাশে একটি ত্রিপল টাঙিয়ে সেখানেই থাকতে দেন ওই মহিলা। পরে এই বিষয়টি যায় আদালতে। এবার কলকাতা হাইকোর্ট সেই নাবালককে কার্যত নতুন জীবন দিল।
আরও পড়ুন- সভাপতির পদ থেকে অপসারিত সুবল ভৌমিক, আস্থা নেই তৃণমূলের
সমীর টিংওয়া নামে দশম শ্রেণীর নাবালক ছাত্র আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, তার বাবা একটি স্কুলে অশিক্ষক কর্মী ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর সেই চাকরি পান তার সৎ মা পিংকি রনি টিংগুয়া। তবে চাকরি পাওয়ার পরই বেলদা থানা এলাকায় তার নিজের বাড়ি চলে যায় সে। মৃত স্বামীর পরিবারকে দেখা তো দূরের কথা তাদের কোনও খোঁজই নিত না পিংকি। এদিকে, বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুরের ছতরী এলাকায় একটি বট গাছের তলায় একটি ত্রিপল টানিয়ে দাদু দয়ানন্দ টিংওয়াকে নিয়ে বাস করতে শুরু করে সমীর। সেই অবস্থাতেই সে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর নিয়ে পাস করে। কিন্তু জীবনযাপন করা দুষ্কর হয়ে উঠেছিল তার। অর্থনৈতিকভাবে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়ার কারণে শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সে।
আরও পড়ুন- এসএসসি’র প্রাক্তন চেয়ারম্যানের ফ্ল্যাট সিল! নিয়োগ দুর্নীতিতে পদক্ষেপ
এই মামলায় এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সমস্ত বিষয় শুনে জেলা শাসককে তাদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে জেলা শিশু কল্যাণ আধিকারিককে সমীরের বিষয়টি দেখার নির্দেশের পাশাপাশি পিংকিকে প্রতি মাসে দেখভাল খরচ বাবদ ৭ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তিনি সমীরকে বলেন, ”ভালো পড়াশুনা কর। আমরা সকলে করে তোমার সঙ্গে আছি।” তবে বুধবার সমীরকে আদালতে ডেকে পাঠিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তার কাছ থেকে জানতে পারেন এপ্রিল মাস থেকে সৎ মা সমীরকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পিংকি দ্বিতীয় বিয়ে করে পালিয়ে গিয়েছে। এরপরই ক্ষুব্ধ বিচারপতি পিংকির বেতন বন্ধের নির্দেশের পাশাপাশি তাকে ৩০ আগস্ট হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যকে বিচারপতি পুর ঘটনার বিবরণ দেন। প্রশ্ন করেন, এটা সঠিক হচ্ছে? বিকাশ জানান, সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আদালতের কাছে এটাই প্রত্যাশা করেন মানুষ। যেখানে সরকার ব্যর্থ, সেখানে আদালতকে এগিয়ে আসতে হবে।