মনের কথা ছবি হয়ে ফুটে উঠবে এ ক্যামেরায়, দাবি ছিল নিকোলা টেসলার

মনের কথা ছবি হয়ে ফুটে উঠবে এ ক্যামেরায়, দাবি ছিল নিকোলা টেসলার

কলকাতা:  ‘গোপনো কথাটি রবে না গোপেন’! মনের কথা কি সত্যি জানা যায়? মনের মণিকোঠায় কী লুকনো আছে তা বোঝা অতি বড় বোদ্ধারও অসাধ্য৷ কবিরা হয়তো বলবেন, চোখেরও তো ভাষা আছে৷ যে ভাষা মনের কথা ব্যক্ত করে৷ কিন্তু তা তো নেতাহই কবির কল্পনা৷ যুক্তিবিদদের কাছে যা ধোপে টেকে না৷ 

আরও পড়ুন- রুদ্ধদ্বার বৈঠক নয়, ‘টিভি চ্যানেলে বিতর্কে বসুন’, মোদীকে প্রস্তাব ইমরানের!

মস্তিষ্কের গহনে কী চিন্তাভাবনা চলছে তা বুঝে ওঠা আমাদের কাছে অসম্ভব হলেও, এককালে মানুষের মন পড়ার দাবি করেছিলেন সার্বিয়ান-আমেরিকান উদ্ভাবক নিকোলা টেসলা। তবে এখানেই থামেননি তিনি। তাঁর দাবি ছিল আরও ভয়ঙ্কর। টেসলারের দাবি ছিল, মানবমস্তিষ্কে চিন্তা-ভাবনার আনাগোনা সহজেই পড়ে ফেলা যায়। শুধু তাই নয়, সেই চিন্তা-ভাবনার ছবিও তুলে ফেলা সম্ভব। যেখানে চলবে না মনে এক আর মুখে আরেক বলার জল্পনা! 

টেসলার চমকে দেওয়ার মতো দাবি ছিল, শুধুমাত্র মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার হদিশ পাওয়াই নয়, তা নাকি ‘দেখা’-ও সম্ভব। আপাতঅবিশ্বাস্য হলেও, তাঁর দাবি ছিল, মস্কিষ্কে চলা চিন্তা-ভাবনার ছবিও নাকি তোলা যেতে পারে। দুঃখের বিষয় হল টেসলার এই উদ্ভাবন দিনের আলো দেখেনি৷ তবে তাঁর এই ‘থট ক্যামেরা’ নিয়ে কম গবেষণা হয়নি৷ আজও বিজ্ঞানীদের কাছে কৌতুহলের বস্তু হয়ে রয়েছে এই ‘থট ক্যামেরা’৷ তবে যুক্তিবাদীদের একাংশ টেসলার এই দাবি মানতে নারাজ৷ তাঁদের যুক্তি, চিন্তাভাবনার কোনও অবয়ব হয় না৷ তাহলে ক্যামেরায় কী ভাবে তা ধরা সম্ভব? এর উত্তর অবশ্য টেসলা দিয়ে গিয়েছিলেন৷ 

জানা যায়, ১৮৯৩ সালে নিজের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষানিরীক্ষা করার সময় ‘থট ক্যামেরা’ তৈরির কথা মাথায় আসে টেসলার। যদিও এই সময় তৎক্ষণাৎ কাউকে কিছু জানননি তিনি৷ দীর্ঘ সময় পর এ নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করেছিলেন৷ ওই সাক্ষাৎকারে টেসলা বলেছিলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত আমাদের চিন্তা-ভাবনার ছবি চোখের মণিতে ফুটে ওঠে।’’ তার কথা যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নেওয়ায় হয়, কিন্তু প্রশ্ন হল কী ভাবে তা সম্ভব? সেই জবাব দিয়েছিলেন সার্বিয়ান-আমেরিকান উদ্ভাবক। তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের চিন্তা-ভাবনার ছবি চোখের মণিতে ভেসে ওঠে৷ যথাযথ যন্ত্রের সাহায্য সেই ছবি দেখা সম্ভব।’’ কিন্তু কী সেই যন্ত্র? 

এর পরেই ‘থট ক্যামেরা’র প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন টেসলা৷ তিনি জানান,  মণিতে ফুটে ওঠা মস্কিষ্কের চিন্তাভাবনার প্রতিচ্ছবি একটি কৃত্রিম অক্ষিপটে (রেটিনায়) ফেলে তার ছবি তোলা সম্ভব। এবং সেই ছবি কোনও পর্দায় ভাসিয়ে দিলেই ওই জেনে ফেলা সম্ভব ওই মানুষটির মনের কথা৷ টেসলা কবে ‘থট ক্যামেরা’ নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছিলেন তা নিয়েও দ্বিমত রয়েছে৷ অনেকের দাবি, ১৮৯৩ সালে নয়, গত শতকের তিরিশের দশকে ‘থট ক্যামেরা’-র কথা ভেবেছিলেন তিনি। ওই ক্যামেরায় মানবমনের কল্পনাগুলো  স্লাইডশোয়ের মতো দেখা যাবে। সাল-তারিখ নিয়ে মতভেদ থাকলেও, টেসলার এই  উদ্ভাবন যে চমকে দেওয়ার মতো ছিল, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত ছিল না। 

টেসলা বলেছিলেন, এই ক্যামেরার লেন্সে মানুষের মন খোলা বইয়ের মতো হয়ে যাবে৷ যা সহজেই সকলে পড়ে নিতে পারবে৷ তবে টেসলার সেই চিন্তাভাবনা সাফল্যের মুখ দেখতে পায়নি৷ উল্লেখ্য বিষয় হল, শুধুমাত্র ‘থট ক্যামেরা’-ই নয়। আরও একাধিক অভূতপূর্ব উদ্ভাবনের সঙ্গে টেসলারের নাম জড়িয়ে রয়েছে৷ বিদ্যুৎ পরিবহণ ব্যবস্থায় এসি বা অল্টারনেটিং কারেন্ট-এর ডিজাইন তৈরির পিছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

১৮৫৬ সালে মধ্য-পূর্ব ইউরোপের অস্ট্রিয়ায় জন্ম তাঁর৷ যা এখন অধুনা ক্রোয়েশিয়া৷ স্কুলের পাঠ শেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পদার্থবিদ্যা অধ্যায়ন করেন টেসলা। তবে প্রথাগত ডিগ্রি ছিল না তাঁর। স্নাতকস্তরের চার বছরের শিক্ষা শেষ করেছিলেন তিন বছরে। ১৮৮৪ সালে তিনি আমেরিকায় চলে আসেন এবং সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন৷