ইউনেস্কোর স্বীকৃতির নেপথ্য কুশীলব তপতী গুহঠাকুরতাকে সংবর্ধনা মমতার

ইউনেস্কোর স্বীকৃতির নেপথ্য কুশীলব তপতী গুহঠাকুরতাকে সংবর্ধনা মমতার

কলকাতা:  বাংলার দুর্গাপুজোকে ‘আবহমান ঐতিহ্য’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। তাদের ধন্যবাদ জানিয়েই বৃহস্পতিবার কলকাতায় পথে শোভাযাত্রা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে পুজোর এক মাস আগেই পড়ে গেল ঢাকে কাঠি৷ কিন্তু, দুর্গাপুজোর এই ‘ঐতিহ্যশালী’ সম্মানে ভূষিত হওয়ার নেপথ্য যাঁর অবদান, তার কথা না বললেই নয়৷ তিনি হলে তপতী গুহঠাকুরতা। আজ শোভাযাত্রা শেষে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্মানিত করলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী৷ 

আরও পড়ুন- জিজ্ঞাসাবাদে কী নির্যাস উঠে এল? CBI-কে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ

কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর অধিকর্তা হিসাবে দশ বছরের বেশি সময় দুর্গাপুজো নিয়ে কাজ করেছেন তপতী৷ কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের জন্য তিনি একটি খসড়া রূপরেখা তৈরি করেছিলেন। ২০১৮-র সেপ্টেম্বর থেকে সেই খসড়া তৈরির কাজ শুরু করেন তপতী। ২০১৯ সালে তা কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে জমা দেন। যেহেতু ২০০৩ সাল থেকেই তিনি এই বিষয়ে গবেষণা করে আসছিলেন, ফলে সহজেই কলকাতার দুর্গাপুজো নিয়ে অসংখ্য তথ্য মেলে ধরতে পেরেছিলেন৷  তাঁর সেই নথির ভিত্তিতেই ইউনেস্কো বাংলার দুর্গাপুজোকে ‘হেরিটেজ’ স্বীকৃতি প্রদান করে৷ 

যদিও বিরোধীদের দাবি ছিল, যে ইতিহাসবিদ তথা কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর প্রাক্তন অধিকর্তার তথ্যকে সামনে রেখে এই সম্মান, তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হল না কেন? এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও সরব হয়েছিলেন নেটিজেনদের একাংশও। অনেকে বলেছিলেন বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে তপতীকে না ডেকে তাঁকে অসম্মান করা হল। কিন্তু দিনের শেষে দেখা গেল, রেড রোডের অনুষ্ঠানমঞ্চে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানান। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নিজের বক্তব্যেও ধন্যবাদ জানান তাঁকে।এদিন মূল অনুষ্ঠানমঞ্চে অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গেই ছিলেন তপতী গুহঠাকুরতা। সঞ্চালক তাঁর পরিচয় করিয়ে বলেন, ‘তিনি একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ৷ বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচারে তাঁর অবদান মনে রাখার মতো।’ 

তবে বিরোধীরা থামতে নারাজ৷ তাদের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ‘সাফল্য’কে তাঁর বলে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করছেন। তার জন্যই কোটি টাকার আয়োজন। রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে আয়োজিত এদিনের মিছিলে খরচ হয়েছে ২ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা৷ যা নিয়ে আক্রমণ শানাতে ছাড়েননি বামেরা৷ তাঁদের কাছে এটা ‘ফূর্তির অজুহাত’৷ তাঁদের হিসাব বলছে, মিছিলে থাকা দুর্গামুর্তির  জন্য খরচ হয়েছে ৭ লক্ষ ৮৪ হাজারের বেশি টাকা। বর্ণাঢ্য মিছিলের জন্য প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা৷ রেড রোডে যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে সেই মঞ্চের খরচও প্রভূত৷ এছাড়াও অতিথি আপ্যায়নের জন্য ছিলেন ৩০ জন ‘ইউনিফর্ম’ পরিহিতা মহিলা৷ পাশাপাশি থাকবেন এমনই ৪০ জন ‘যথাযথ ইউনিফর্ম’ পরিহিত পুরুষ৷ আনুষাঙ্গিক জাঁকজমকের খরচও কম নয়৷ এই চমক দিতে সরকারের খরচ ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ৩১ হাজার ৮০৮ টাকা।