সিঙ্গুর থেকে টাটাদের উচ্ছেদ নিয়ে বিস্ফোরক মমতা, তীব্র প্রতিক্রিয়া সুজন, অধীর, লকেটের

সিঙ্গুর থেকে টাটাদের উচ্ছেদ নিয়ে বিস্ফোরক মমতা, তীব্র প্রতিক্রিয়া সুজন, অধীর, লকেটের

কলকাতা: সিঙ্গুর থেকে টাটার বিদায় নিয়ে বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷  সিঙ্গুর থেকে টাটার ন্যানো প্রকল্প সরিয়ে দেওয়ার দায় তাঁর নয়৷ বুধবার শিলিগুড়ির বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান থেকে মমতা বলেন,  ‘‘টাটাকে আমি তাড়াইনি৷ সিপিএম তাড়িয়েছে৷ জোর করে জমি দখল করতে গিয়েছিল৷ আমরা জমি ফেরত দিয়েছি৷’’ তিনি আরও বলেন, আমাদের এত প্রকল্প হয়েছে, কারও জমি দখল করা হয়নি৷ আমরা কোনও শিল্পপতির সঙ্গে বৈষম্য করি না৷ 

মমতার এই বিস্ফোরক মন্তব্য প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মমতার কথা শুনলে আজকাল বড় অস্বস্তি লাগে৷ মিথ্যের একজন ডিলিট৷ ঘটনাক্রমে তিনি পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী৷ উনি এখনও বলেননি যে, টাটাকে সিঙ্গুর থেকে তাড়ানোর জন্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ধর্নার বসেছিলেন৷ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলেন৷ টাটারা কোনও ভাবেই যাতে সিঙ্গুরে কারখানা করতে না পারে, তার জন্য বুদ্ধবাবুর নেতৃত্বে সারা পশ্চিম বাংলার বামফ্রন্ট, বামপন্থী ও সাধারণ মানুষ ভাঙচুর চালিয়েছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুই করেননি৷’’ খোঁচা দিয়ে সুজন আরও বলেন, ‘‘টাটারা ভুল করে বলেছিল, আমার কপালে বন্দুক ঠেকালে আমি আর কী করতে পারি৷ এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কেই যে বলেছিলেন, সেটা বোধ হয় ওঁর জানা নেই৷ ওঁর স্মৃতিটা ভয়ঙ্কর দুর্বল৷’’ তোপ দেগে সুজন বলেন, ‘‘এত মিথ্যে কথা বলাটা একেবারেই সমীচীন নয়৷ তার উপর যদি মুখ্যমন্ত্রী হন, তাহলে আরই সমীচীন নয়৷ উনি বাংলার সর্বনাশ করেছেন৷ কারণ ওটা টাটার নয়, পশ্চিমবঙ্গের যুব সমাজের ভবিষ্যতের প্রকল্প ছিল৷ 

এদিকে একহাত নিয়ে কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ইউনেস্কোকে ডেকে যদি উনি বলেন, ভারতে শ্রেষ্ঠ মিথ্যেবাদী রাজনীতিবিদদের তালিকা তৈরি করুন, ইউনেস্কো সবার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লিখবে৷ টাটাদের উৎখাত করার পর দিদি সগর্বে সিঙ্গুর দিবস পালন করেছিলেন৷ টাটাদের তৈরি করা কারখানাকে সরকারি পয়সায় ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন৷ কংক্রিটের জঙ্গল সাফ করে ফাঁকা জমিতে বীজ ঢেলে বলেছিলেন, আবার সিঙ্গুরবাসীকে চাষ করার অধিকার দিলাম৷ টাটারা সেই সময় রাজ্যের মানুষকে বলেছিল, দিদি ট্রিগির টিপে দিলেন৷ আমার আর কিছু করার নেই৷ যখন বন্দুক উঁচিয়েছিল তখন ভয় পাইনি৷ কিন্তু ট্রিগার টেপার পর ব্যবসার আর কিছু থাকে না৷ অধীরের কথায়, রাজ্য থেকে শিল্পপতিদের উৎখাত করেই ক্ষমতায় এসেছেন মমতা৷ এখন আদানিদের পা ধরছেন৷ টাটাদের কাছে হাত পাতছেন৷  

প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও৷ তিনি বলেন, ‘‘দীপাবলীর আগে বড় মিথ্যা কথা৷ ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার আগে উনি বলেছিলেন আমি কৃষি চাই, শিল্প চাই না৷ এটা বলেই টাটাকে বাই বাই বলে দিলেন৷ টাটার শিল্পকে রাজ্য থেকে তাড়ানোর জন্য এতদিনের অনশন করলেন৷ কৃষকদের বলেছিলেন, জমি ফেরত দেব৷ সেখানে আবার চাষের কাজ হবে৷ সেই জমি অবশ্য আজ পর্যন্ত কৃষকরা চাষ যোগ্য করতে পারলেন না৷ আর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর উনি সেদিকে ঘুরেও তাকালেন না৷ আজকে এতবড় মিথ্যা কথা বলছেন!’’ লকেট আরও বলেন, স্থানীয় কৃষক পরিবারের ছেলেমেয়েরা সেখানে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণও নিয়েছিল৷ কিন্তু তাঁদের আর এ রাজ্যে কাজ জোটেনি৷ তাঁরা গুজরাত, উত্তর প্রদেশে চলে গিয়েছে৷  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 4 =