কিয়েভ: ১৮ দিন পেরিয়ে গিয়েছে৷ যুদ্ধ থামার কোনও ইঙ্গিত নেই ইউক্রেনে৷ বরং শক্তি আরও বাড়িয়ে কিয়েভ দখল নিতে এগোচ্ছে রুশ বাহিনী৷ শুরুটা হয়েছিল ডনবাস দিয়ে৷ তার পর বাঁধ ভাঙা স্রোতের মতো ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে পুতিনের ফৌজ৷ দনেৎস্কে যখন রুশবাহিনী ক্রমাগত বোমাবর্ষণ করছে, তখন দেশ থেকে না পালিয়ে অকুতোভয়ে লড়াই করে গিয়েছিলেন ভ্যালেরিয়া মাকসেটস্কার৷ দনেৎস্কে হামলা থামার পরেই মা’কে সঙ্গে নিয়ে কিয়েভে চলে আসেন তিনি৷ নেমে পড়েন কাজে৷ রুশ হামলায় আহতদের বিরামহীন ভাবে চিকিৎসা জুগিয়ে গিয়েছেন৷ সেই ভ্যালেরিয়ার দেহই ছিন্নিভিন্ন হয়ে পড়ে রইল কিয়েভের রাস্তায়৷
আরও পড়ুন- চরম আঘাত হানতে কিয়েভের দিকে এগোচ্ছে ‘ডেথ কনভয়’
পেশায় চিকিৎসক বছর ৩১-এর ভ্যালেরিয়া ছিলেন দনেৎস্কের বাসিন্দা৷ কিন্তু সেখানে রুশ বাহিনীর সহায়তায় বিদ্রোহী বাহিনীর কব্জা সম্পূর্ণ হওয়ার পর মাকে নিয়ে কিয়েভের শহরতলিতে পালিয়ে আসেন ভ্যালেরিয়া৷ সেখানে পৌঁছেও অবিরাম আর্তদের সেবা করে গিয়েছেন তিনি৷ যোগ দিয়েছিলেন ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)’-এ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই সংস্থার হতেই চিকিৎসার কাজ করছিলেন৷ মাকে নিয়ে দেশ ছাড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ভ্যালেরিয়া৷ কিন্তু তিনি তা করেননি৷ এইভাবে দেশের মানুষগুলোকে অসহায় অবস্থায় ফেলে পালাতে পারেননি৷ দেশান্তরিত হয়ে শান্তিতে বাঁচা নয়, বরং নিজেকে নিবিদন করেছিলেন মানব সেবার কাজে৷ এদিন মায়ের জন্য হন্যে হয়ে ওষুধের খোঁজ করছিলেন ভ্যালেরিয়া৷ সেই সময় রুশ গোলায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় ভ্যালেরিয়ার দেহ৷ রুশ গোলায় প্রাণ হারিয়েছেন অদূরেই গাড়িতে বসে থাকা ভ্যালেরিয়ার অসুস্থ মা’ও৷
সূত্রের খবর, রুশ ট্যাঙ্কের ছোড়া গোলাতেই মৃত্যু হয়েছে ভ্যালেরিয়ার। দিন কয়েক বাদেই ছিল তাঁর ৩২তম জন্মদিন। জন্মদিনের আগেই রুশ গোলা কেড়ে নিল তাঁর প্রাণ৷ ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রাইমিয়া আগ্রাসনের সময়ও আহতদের চিকিৎসায় এগিয়ে গিয়েছিলেন ভ্যালেরিয়া। ইউএসএআইডি-র সামান্থা পাওয়ার তাঁর মৃত্যুর খবর জানিয়ে শোকবার্তায় বলেন, ‘রুশ আগ্রাসনের শুরুতেই ইউক্রেন ছাড়তে পারতেন ভ্যালেরিয়া। কিন্তু তিনি মনে করতেন, তিনি যে কাজে ব্রতী হয়েছেন, যুদ্ধের সময় তা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। মায়ের ওষুধের খোঁজে মরিয়া হয়ে ঘুরছিলেন, কিন্তু রাশিয়ার গোলা তাঁকেও রেয়াত করল না।’