টেবিলে বসে ‘বাবুগিরি’! এবার সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ হাই কোর্টের

টেবিলে বসে ‘বাবুগিরি’! এবার সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ হাই কোর্টের

 কলকাতা: তিনি অনেকের কাছেই ত্রাতা৷ তাঁর একের পর এক রায় গোটা রাজ্যে সাড়া ফেলেছে৷ এবার সরকারি বাবুদের ‘বাবুগিরি’ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ সরকারি টেবিলে বসে কাজের নামে কেন ‘বাবুগিরি’! প্রশ্ন তাঁর৷ এদিন  বিচারপতি বলেন, ‘বাবুগিরি’ দেখানো সরকারি অফিসারদের বেতনবৃদ্ধি-সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কেন দেওয়া হবে? সেই সঙ্গে ভিজিল্যান্স কমিশনারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্তের নির্দেশও দেন তিনি৷

আরও পড়ুন- ‘বাঙালির মাছ’ নিয়ে মন্তব্যে বিপাকে পরেশ, কলকাতা পুলিশের তলব

মঙ্গলবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, টেবিলের বসে ক্ষনমতার আড়ালে সরকারি অফিসাররা বাবুগিরি করছেন কিনা, তা খুঁজে দেখবেন ভিজিল্যান্স কমিশনার। ১৫ দিনের মধ্যে তাঁকে এ বিষয়ে কলকাতা হাই কোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হবে৷ বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘যাঁদের নিজের কাজ নিয়ে কোনও অনুভূতি নেই। নিজের দায়িত্বটুকুও পালন করেন না, কেন তাঁদের বেতন, ডিএ দেওয়া হবে? এই সব সরকারি অফিসারদের বেতনবৃদ্ধি-সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত বলে মনে করে না আদালত। তাঁরা ঠিক মতো নিজেদের কাজ করছেন কি না, তার তদন্ত করা প্রয়োজন।’’

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ অক্টোবর আশা শ্রীবাস্তবর নামে ওই শিক্ষিকা চাকরি জীবন থেকে অবসর নেন৷ তিনি কলকাতার মারোয়াড়ি বালিকা বিদ্যালয়ের কর্মরত ছিলেন৷ অবসরের এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে প্রাপ্য এরিয়ার পাওয়ার জন্যে আবেদন করেছিলেন তিনি। টাকার অঙ্কটা প্রায় দেড় লক্ষ। কিন্তু, সেই এরিয়ারের টাকা তিনি পাননি এবং এর এক বছরের মধ্যেই তিনি অবসর নেন৷ এর পর আরও দু’বছর কেটে যায়৷ তবু প্রাপ্য টাকা পাননি। অবশেষে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি৷ 

 

আশাদেবীর অভিযোগ, রুরাল ডিপার্টমেন্টের কর্মচারী মহাদেব সরেন তাঁর টাকা আটকে রেখেছেন। গতকাল সেই মামলার শুনানির সময় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, যত শীঘ্র সম্ভব টাকা দিতে হবে৷ কলকাতার ডিআই-কেও তিনি হাই কোর্টে ডেকে পাঠান। এদিন ডিআই এসে জানান, ওই শিক্ষিকা তাঁর প্রাপ্য পেয়ে গিয়েছেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ধমক দিতেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজ হয়ে যায়৷ 

তবে টাকা পেয়েছে শুনেই তিনি শান্ত হননি। মঙ্গবার ফের বিচারপতির নির্দেশ, যে সরকারি কর্মচারীর এতদিন ধরে আটকে রেখেছিলেন, সেই মহাদেব সরেনকেও আজকের মধ্যে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ বিচারপতির হুঙ্কার, ‘‘একমাত্র শ্মশান ছাড়া তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, হাজিরা দিতেই হবে৷’’

দুপুরে জেলা স্কুল পরিদর্শক এসে জানান, আদালতের নির্দেশ আসা মাত্র টাকা পাঠানো হয়েছে। একথা শুনেই বিচারপতির প্রশ্ন, এত বছর কেন অবসরকালীন পাওনা আটকে রাখা হয়েছিল? পরিদর্শকের উত্তর, নথি যাচাই করে ২ বছর আগে শিক্ষা দফতরকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, এর পর থেকে তা ক্লার্কের টেবিলেই পড়ে ছিল৷ এর পর ভিজিল্যান্স কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাবু কালচার বন্ধ করতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে সুবিধা পায় তা দেখতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।’’ মামলাকারীর আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এত দিন একই ভাবে একই টেবিলে ফাইল পড়ে ছিল। নিডেদের দায়িত্ব নিয়ে সরকারি অফিসাররা যে কতটা উদাসীন, তা এই মামলায় প্রমাণিত।’’