প্রথম দফার যুদ্ধে ইতি ঘোষণার মধ্যেই ইউক্রেনে হাজির পুতিনের খুনি বাহিনী ‘ওয়াগনার গ্রুপ’

প্রথম দফার যুদ্ধে ইতি ঘোষণার মধ্যেই ইউক্রেনে হাজির পুতিনের খুনি বাহিনী ‘ওয়াগনার গ্রুপ’

মস্কো: রুশ আগ্রাসনে গত এক মাস ধরে রক্ত ঝরছে ইউক্রেনে৷ তবে এখনও রাজধানী কিয়েভের দখল নিতে পারেনি পুতিনের ফৌজ৷ ইউক্রেনীয় সেনার যুদ্ধ কৌশলে কিয়েভে ঢুকতে পারেনি তারা৷ কিন্তু, কিয়েভ দখলে মরিয়া রাশিয়া এবার অন্য এক পদক্ষেপ করল৷ কুখ্যাত ‘ওয়াগনার গ্রুপ’কে যুদ্ধক্ষেত্রে নামালেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন৷ যা ‘পুতিনের নিজস্ব সেনা’ নামে পরিচিত৷ 

আরও পড়ুন- প্রথম দফার সামরিক অভিযানে ইতি, হয়েছে লক্ষ্যপূরণ, জানিয়ে দিল রাশিয়া

কী এই ওয়াগনার গ্রুপ? এটি একটি স্বনিয়ন্ত্রিত সামরিক বাহিনী৷ কুখ্যাত এই বাহিনীর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ধর্ষণ, ডাকাতি, খুন এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে৷ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এই ওয়াগনার গ্রুপই এখন পুতিনের কাছে তুরুপের তাস৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ক্লিটসকো ভ্রাতৃদ্বয়-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বকে হত্যার দায়িত্ব সঁপা হয়েছে৷ 

ক্রেমলিনের সঙ্গে ওয়াগনার বাহিনীর ৬০০ ভাড়াটে খুনির সম্পর্কের যে জল্পনা ছিল, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে রাশিয়া৷ পশ্চিমী দুনিয়া মনে করে, রাশিয়ার হয়ে অনেক গোপন কাজই সামলে থাকে এই বাহিনী৷ এমনও দাবি করা হয়, এই বাহিনী শুধুমাত্র পুতিনের অঙ্গুলিহেলনেই কাজ করে থাকে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও ওয়াগনার বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেন, সিরিয়া, লিবিয়া সহ বিভিন্ন দেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।

ওয়াগনার বাহিনীতে নতুন সদস্য নিয়োগের দায়িত্ব রয়েছে অলিগার্চ ইয়েভজেনি প্রিগোজিন এর হাতে৷ অলিগার্চ আবার পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত৷ ক্রেমলিনের বিশেষ বিশেষ কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব রয়েছে তাঁর কাঁধেই৷ পাশাপাশি কেটারিংয়ের ব্যবসা সামলান তিনি৷ তাই অনেকের কাছেই অলিগার্চ ‘পুতিনের রাঁধুনী’ হিসাবেও পরিচিত। দিন কয়েক আগেই ক্রেমলিন থেকে তলব করা হয়েছিল তাঁকে৷ কয়েক সপ্তাহ আগে ইউক্রেনে গিয়ে ওয়াগনার বাহিনীকে অভিযান চালানোর জন্যে বিপুল অর্থের প্রস্তাবও দেন৷ এর আগে পূর্ব আফ্রিকায় এই কুখ্যাত বাহিনীকে মোতায়েন করেছিল মস্কো৷ 

জানা যায়, রাশিয়ার কয়েকশো অভিজ্ঞ সেনা নিয়ে এই দুর্ধর্ষ বাহিনী গড়ে উঠেছে৷ শোনা যায়, ডনবাসের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা রাশিয়ার নির্দেশ মানতে না চাইলে তাঁদের হত্যা করার জন্য এই বাহিনীকে পাঠানো হয়। কিন্তু, সেই হত্যাকাণ্ডের দায় চেপেছিল ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর উপরে৷ 

এদিকে টানা এক মাস যুদ্ধের পর রাশিয়া জানাচ্ছে, ইউক্রেনে প্রথম পর্যায়ের সামরিক অভিযানে ইতি৷ প্রথম দফার অভিযানে তাদের লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। অনেকটাই থমকে গিয়েছে রুশ ফৌজের অগ্রগতি৷ 

শুক্রবার যুদ্ধের এক মাস পূর্তির পর রুশ সেনার ‘ফার্স্ট ডেপুটি চিফ অফ জেনারেল স্টাফ’ কর্নেল জেনারেল সের্গেই রুডস্কয় বলেন, ‘‘সেনা অভিযানের প্রথম পর্যায়ের যে লক্ষ্যগুলি নির্ধারিত হয়েছিল সেগুলি পূরণ হয়েছে৷ এবার আমাদের মূল লক্ষ্য পূরণের জন্য পূর্ব ইউক্রেনের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’’ কিন্তু রুশ সেনার সেই ‘লক্ষ্য’ কী? কর্নেল জেনারেল রুডস্কয় সাফ জানিয়েছেন, ‘‘ডনবাসের মুক্তি।’’

সেনা সূত্র উদ্ধৃত করে ইউক্রেনের সংবাদপত্র ‘দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এর দাবি করা হয়েছিল, আগামী ৯ মে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে ইতি টানতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই তারিখটির সঙ্গে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের পর ১৯৪৫ সালের ৯ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে সামরিক অভিযান শেষ করেছিলেন অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জোশেফ স্তালিন। এখনও রাশিয়া জুড়ে পালিত হয় ৯ মে দিনটি৷ ওই সংবাদপত্রের দাবি ছিল, পুতিন হয়তো স্তালিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নেবেন৷ 

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর বেলা ইউক্রেনে সেনা অভিযানের কথা ঘোষণা করেন পুতিন৷ এর পরেই হামলা শুরু করে রুশ ফৌজ। এর ঠিক তিন দিন আগে পূর্ব ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে (একত্রে ‘ডনবাস’ বলে অভিহিত হয়) স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন৷ তবে, ইউক্রেনের প্রতিরোধের জেরে এখনও পূর্ব ডনবাসের উপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি মস্কো। রুশ ফৌজ এবং স্থানীয় রুশভাষীদের নিয়ে গঠিত মিলিশিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে ডনবাসে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে ইউক্রেন সেনা এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অনুগত স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী।