বাবা এসি মেকানিক, অভাব নিত্যসঙ্গী, সব বাধা পেরিয়ে ক্যাটে দুর্দান্ত ফল আমদাবাদের ছেলের

বাবা এসি মেকানিক, অভাব নিত্যসঙ্গী, সব বাধা পেরিয়ে ক্যাটে দুর্দান্ত ফল আমদাবাদের ছেলের

41548aa86d29bb9b4ac887a206da7f20

আমদাবাদ: জীবন তাঁকে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল৷ আর সেই চ্যালেঞ্জ হাসিমুখে অ্যাকসেপ্ট করেছিলেন আমদাবাদের ছেলে রাজিন মনসুরি৷ এক কঠিন লড়াইয়ের পর ‘কমন অ্যাডমিশন টেস্ট’ (ক্যাট) পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফল করলেন তিনি।  আমদাবাদ বা বেঙ্গালুরু আইআইএমে মিলবে পড়ার সুযোগ৷ 

আরও পড়ুন- পড়ুয়াদের নিয়ে উলটে গেল বাস, ভয়াবহ ঘটনায় মৃত ৫

রাজিনের জীবনের এই সফরটা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না৷ বাবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি মেরামতির কাজ করেন। মাস গেলে রোজগার বড়জোড় ২৫ হাজার টাকা৷ তা দিয়েই এক কামরা ঘরে চলত চার জনের সংসার৷ ফলে পদে পদে প্রতিকূলতা এসেছে৷ তবে কোনও কিছুই তাঁকে রুখতে পারেনি৷ ছোট থেকেই রাজিন নিজের লক্ষ্যে অবিচল৷ হাজারো প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন৷ 

আমদাবাদের জুহাপুরা এলাকার এসি মেকানিক রাজিনের বাবা৷ মা গৃহবধূ৷ এক ভাইও রয়েছে তাঁর৷ বাড়িতে আর্থিক অনটন নিত্যসঙ্গী। যদিও সেই সমস্যা কখনওই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি রাজিনের সামনে। ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী রাদিন। কোনও দিন কোচিংও নেননি তিনি৷ শুধুমাত্র বৃত্তির ভরসায় এত দূর পড়াশোনা করেছেন৷ রাজিনের স্বপ্ন ছিল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করার। গত বছর ক্যাট পরীক্ষা দেন৷ ফলও ভাল করেন। আইআইএম উদয়পুরে পড়ার সুযোগও পেয়ে যেতেন। কিন্তু রাজিন চাইতেন সেরা হতে! 

সেরা হওয়ার স্বপ্ন পূরণেই নতুন করে পড়া শুরু করেন তিনি। তাঁর মেধা আঁচ পেয়ে তাঁকে অর্ধেক খরচে কোচিং দিতে শুরু করেন এক শিক্ষক। অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে না পারলেও, বাকি সব কিছুতেই ছেলের পাশে বটবৃক্ষের মতোই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর বাবা-মা। রাজিনও শুরু করলেন দ্বিগুণ পরিশ্রম৷ অবশেষে স্বপ্নপূরণ হল তাঁর৷  এ বছর ক্যাটে ৯৯.৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেন এসি মেকানিকের মেধাবী ছেলে। দেশের সেরা দুই আইআইএম, আমদাবাদ বা বেঙ্গালুরুতে তাঁর সুযোগ পাওয়াটা এবার নিশ্চিত।

রাজিনের কথায়, ‘‘আমার পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়। তাই হাই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আমার লক্ষ্য থাকত, যে ভাবেই হোক বৃত্তি পেতেই হবে। বৃত্তি নিয়েই স্কুলের পড়াশোনা শেষ করি। তার পর আমদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেধাবৃত্তি পেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কোর্স কমপ্লিট করি৷ ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরেই একটা চাকরি পেয়েছিলাম। বছরে ৬ লক্ষ টাকার প্যাকেজ৷ কিন্তু আমি চেয়েছিলাম আরও ভাল কিছু করতে। তাই ঠিক করি ম্যানেজমেন্ট পড়ব৷’’ কিন্তু সখানেই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ৷ টাকার অভাবে গত বছর ক্যাটের প্রস্তুতির জন্য কোচিং নিতে পারেননি তিনি৷ ফলতঃ আইআইএম আমদাবাদ বা বেঙ্গালুরুতে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কঠিন হয়ে ওঠে৷ অতঃপর আবার শুরু করেন পরীক্ষার প্রস্তুতি। তাঁর মেধা ও পরিশ্রম দেখে অর্ধেক খরচে পড়াতে শুরু করেন কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষক। এবার আর কাউকে হতাশ করেননি রাজিন।

আমদাবাদের এই মেধাবীর কথায়, ‘‘এটাই ছিল আমার লক্ষ্য৷ সেই লক্ষ্যপূরণ করতে পেরে আমি খুশি। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। আমার মতো যাঁরা লড়াই করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের পাশে থাকতে চাই।’’