প্রাপ্য পেতে কেটে গেলে ৪৭ বছর! বৃদ্ধার আনন্দাশ্রুতে খানিক স্তব্ধ হল এজলাস

প্রাপ্য পেতে কেটে গেলে ৪৭ বছর! বৃদ্ধার আনন্দাশ্রুতে খানিক স্তব্ধ হল এজলাস

কলকাতা: ২৯ বছর বয়সে স্বামী, চাকরি হারিয়েছিলেন। শুরু হয়েছিল লড়াই। তারপর থেকে দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে অনেকগুলি বছর। এখন তাঁর বয়স ৭৬। মাঝের এই ৪৭ বছর তিনি লড়াই করেছেন শুধু প্রাপ্যটুকু পাওয়ার জন্য। আজ সেই ক্ষণ এসেছে এবং তার জন্যই আদালতের গোটা এজলাস যেন বাক্যহারা। কথা হচ্ছে শ্যামলী ঘোষ নামের এক বৃদ্ধার। যিনি ছিলেন একজন শিক্ষিকা।

আরও পড়ুন- কোনও সংশয় নেই, OMR সিট প্রকাশে চাকরির ভাগ্য খুলল ১৫ জনের

১৯৭৬ সালে হাওড়ার শ্যামপুর হাইস্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন এই বৃদ্ধা। তবে সেখান থেকে শ্যামলী ঘোষকে বিনা ব্যাখ্যায় বরখাস্ত করা হয়েছিল। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৯ বছর। ঠিক সেই সময় থেকেই নিজের প্রাপ্য বেতন পাওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। চোখের পলকে যেন সেই লড়াই পার করেছে ৪০ বছরের বেশি সময়। ২০১৩ সালে মেয়াদ অনুযায়ী চাকরি থেকে অবসর নেন শ্যামলী। কিন্তু বেতনের জন্য লড়াই চলতে থাকে। অবশেষে জয়ী হয়েছেন এই অশীতিপর বৃদ্ধা। আর তাঁকে জিতিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গত বছর মে মাসে তিনি এই মামলার রায়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ওই শিক্ষিকার সমস্ত বকেয়া বেতন সুদে আসলে মিটিয়ে দিতে হবে। বকেয়া বেতনের সঙ্গে দিতে হবে ১০ শতাংশ সুদ।

আরও পড়ুন- অবশেষে মিলছে চাকরি! ৬৫ জন ‘যোগ্য’ প্রার্থীদের সুপারিশপত্র দিতে ডাকল এসএসসি

এই রায় শুনে ওই বৃদ্ধা নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। এজলাসেই তিনি বিচারপতির উদ্দেশ্যে বলেন, ”আপনি আইনের যোদ্ধা”। এরপর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে বলেন, ”আইন আপনাকে গাছ তলায় দাঁড় করিয়েছিল, আবার সেই আইনই আপনাকে আপনার প্রাপ্য সম্মান, অর্থ ফিরিয়ে দিল।” তবে ওই বৃদ্ধা এও জানতে চান, তাঁর হারিয়ে যাওয়া ৪৭ বছর বছর কেউ ফিরিয়ে দিতে পারে নাকি। তারপরেই চোখে জল চলে আসে তাঁর, আদালতেও একেবারে যাকে বলে ‘পিন ড্রপ সাইলেন্স।’ তবে এই মামলায় যিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, সেই উলুবেড়িয়া সাবডিভিশনে বনমালী জানা নামের সেই এডিআই-এর এখনও কোনও শাস্তি হয়নি। সেই শাস্তি চান শ্যামলী।

বৃহস্পতিবার বেলা ২ টোয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ১৭ নম্বর এজলাসে হাজির হন তিনি। তাঁকে দেখে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জিজ্ঞেস করেন তাঁর মত প্রবীণ মানুষদের এজলাসে দেখলে খুব খারাপ লাগে। তাঁর পাওনা তো পেয়ে গেছেন, কেন কষ্ট করে আদালতে আসেন? বৃদ্ধা জানান, তাঁকে দেখতে আসেন তিনি। তিনি এলে তাঁর কি অসুবিধা হয়, এটাও জানতে চান। একই সঙ্গে বলেন, দোষীদের শাস্তি চান তিনি। তার উত্তরে বিচারপতি জানিয়েছেন, তাতে সময় লাগবে এবং প্রয়োজন হলে তাঁকেও আদালতে ডাকা হবে। কিন্তু বয়সের জন্যই তাঁকে আপাতত আসতে বারণ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন- বাংলা শিখবেন রাজ্যপাল, সরস্বতী পুজোয় হবে হাতেখড়ি, রাজভবনে আসবেন মমতা

এরপর বেরনোর আগে শ্যামলী দেবী বিচারপতির সামনে দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করেন রবিঠাকুরের পূরবী কাব্যগ্রন্থের লীলাসঙ্গিনী কবিতার অংশ, ‘কেন অবেলায় ডেকেছো খেলায়, সারা হয়ে এল দিন…’। বিচারপতি বলেন, ”আপনি দেখছি কবিতা ভালোবাসেন। যারা কবিতা ভালোবাসে তারা খারাপ হয় না। আপনি ভালো থাকুন।” অন্যদিকে, আদালতের নির্দেশে রাজ্য ভিজিলেন্স কমিশন মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা করে। রিপোর্টে উলুবেরিয়ার এডিআই বনমালী জানার বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ জমা পড়ে। এই বনমালী জানাই শ্যামলী ঘোষকে হেনস্থা করেছিল বলে অভিযোগ। আদালতের নির্দেশ, ভিজিলেন্স কমিশনকে নির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দিয়ে ৩ সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা দফতরের সচিবকে বিষয়টি জানাতে হবে। বনমালী জানার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 3 =