কলকাতা: এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে বেরিয়ে এসেছিল কেঁচো খুড়তে কেউটে৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল নোটের পাহাড়৷ এই অর্পিতা ছিলেন পেশায় অভিনেত্রী৷ একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি৷ আপাতত তাঁর ঠিকানা আলিপুর সংশোধনাগার৷ অর্পিতা গ্রেফতার হওয়ার প্রায় আট মাস পর আরও একবার নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়াল বিনোদন জগতের নাম৷ বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জেলে ফেরার পথে তৃণমূলের যুব নেতা কুন্তল ঘোষের মুখে উঠে এল হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম৷ যিনি সম্পর্কে নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম সাক্ষী গোপাল দলপতির দ্বিতীয় স্ত্রী৷ কুন্তলের দাবি, যাবতীয় টাকা হৈমন্তীর কাছেই আছে৷ তাঁর কথার সূত্র ধরেই কোথাও যেন এক সূত্রে বাঁধা পড়ল অর্পিতা এবং হৈমন্তী৷
অর্পিতার আদি বাড়ি বেলঘড়িয়ায়৷ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ সেখান থেকেই মডেলিং এবং অভিনয় জগতে আসা৷ ২০০৫ সালে মডেলিং দিয়ে বিনোদন জগতে পা রাখেন অর্পিতা৷ প্রসেনজিৎ অভিনীত ‘মামা ভগ্নে’ এবং জিৎ অভিনীত ‘পার্টনার’-এর মতো ছবিতেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কাজ করেছেন তিনি৷ বাংলার পাশাপাশি বেশ কিছু ওড়িয়া ও তামিল ছবিতেও অভিনয় করেছেন৷ তবে তিনি অনেক বেশি পরিচিত নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসাবে৷ এমনকী, এই পুজোর থিম সঙের অ্যাালবামেও বিতর্কিত এই অভিনেত্রীর ছবি ছিল বলে ইডির দাবি৷ ঘটনাচক্রে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷
এ তো গেল তাঁর অভিনয় জগতের গল্প৷ এর পাশাপাশি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভোট প্রচারেও দেখা গিয়েছিল তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতাকে। পার্থের সঙ্গে একই গাড়িতে চেপে জনগণের উদ্দেশে তাঁর হাত নাড়ানোর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা যায়। এ ছাড়াও প্রধান অতিথি হিসাবে পার্থ উপস্থিত আছেন, এমন বহু অনুষ্ঠানেই ছিল অর্পিতার উপস্থিতি। সেই অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকেই থরে থরে সাজানো নোটের বান্ডিল উদ্ধার করে ইডি৷ যদিও অর্পিতার দাবি, এই টাকা তাঁর নয়৷ বরং পার্থর লোক এসে তাঁর ফ্ল্যাটে ওই টাকা টাকা রেখে গিয়েছিল৷
এদিকে, কুন্তলের মন্তব্যে এবার ‘ফোকাস’-এ হৈমন্তী৷ কে এই হৈমন্তী? উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, তাঁর সঙ্গেও যোগ রয়েছে টলিউডের৷ হৈমন্তীর বাড়ি হাওড়ার উত্তর বাকসাড়ায়। সেখানে তিন তলা বাড়িতে থাকেন তাঁর বাবা, মা আর ছোট বোন। ২০১৫-১৬ সালে গোপাল দলপতির সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। এরপরেই মডেলিংয়ের দুনিয়ায় তাঁর পা রাখা। অনেকটা ধূমকেতুর মতই টলি পাড়ায় উত্থান এই অভিনেত্রীর। তদন্তকারীদের অনুমান, নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করতেই হৈমন্তীকে টলিউডে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর চালচলন কোনও অভিনেত্রীর চেয়ে কম ছিল না৷
তাপস মণ্ডলের হয়ে গোপাল দলপতি কাজ করা শুরু করার পর তাঁর হাতে প্রচুর টাকা চলে আসে৷ সেই সময়ই হৈমন্তীর সঙ্গে গোপালের পরিচয়। তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতাও তৈরি হয়। পরবর্তীকালে তাঁরা বিয়ে করেন। এখন কুন্তলের কথা অনুযায়ী, হৈমন্তীর কাছেই রয়েছে সমস্ত টাকা৷ তেমনটা যদি হয়, তাহলে খুব শীঘ্রই হয়তো অর্পিতার মতোই পরিণতি হবে টলিউডের এই স্ট্রাগলিং অ্যাক্টরের৷ হয়তো জেলেই হবে অর্পিতা-হৈমন্তীর মোলাকাত৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>