বাংলাজুড়ে আতঙ্ক ধরিয়ে দিয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাস! শিশু সুরক্ষায় কতটা তৈরি রাজ্য প্রশাসন?

বাংলাজুড়ে আতঙ্ক ধরিয়ে দিয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাস! শিশু সুরক্ষায় কতটা তৈরি রাজ্য প্রশাসন?

 

কলকাতা:  অতিমারি করোনাকে হারিয়ে রাজ্য তথা দেশবাসী বহু আগেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। এখন সবকিছুই স্বাভাবিক। সিনেমা হল-শপিং মল থেকে ফুটবল গ্রাউন্ড, স্কুল-কলেজ থেকে রেস্তোরাঁ, সবকিছুই নিজস্ব ছন্দে চলছে। কিন্তু হঠাৎ করেই অ্যাডিনো ভাইরাসের দাপটে তাল কেটে গিয়েছে। এই ভাইরাসের দাপটে প্রচুর শিশু আক্রান্ত হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে। যা আতঙ্ক ধরিয়ে দিয়েছে রাজ্যবাসীকে। করোনার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে সেটি শিশুদের সেভাবে কাবু করতে পারেনি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, এমন ঘটনা রাজ্য তথা দেশে খুব বেশি দেখা যায়নি। কিন্তু মারণ অ্যাডিনো ভাইরাস শিশুদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে মাথাচাড়া দিয়েছে। মাসখানেক আগে থেকেই এর দাপট দেখা যাচ্ছে। কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হল তখন রাজ্য প্রশাসন সেভাবে এ বিষয়ে মাথা ঘামায়নি। কিন্তু পরিস্থিতি বর্তমানে অত্যন্ত ঘোরালো হয়ে ওঠায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এ বিষয়ে নয়া গাইডলাইন জারি করেছে।

হাসপাতালগুলিতে ভেন্টিলেটর-সহ আইসিইউ, সিসিইউ তৈরি রাখার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দিয়ে প্রচার শুরু করা হচ্ছে। হাসপাতালগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পর্যাপ্ত স্যানিটাইজেশনের কথা বলা হয়েছে।  করোনার মতোই অ্যাডিনো ভাইরাস বেশ ছোঁয়াচে। এর উপসর্গ কোভিডের মতোই। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি শুকনো কাশি বা কখনও বুকে কফ জমে নিউমোনিয়া হচ্ছে শিশুদের। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব-সহ শীর্ষ কর্তারা।

কিন্তু প্রশ্ন হল আরও আগে কেন নড়ে চড়ে বসল না রাজ্য প্রশাসন? তবে কি স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা অ্যাডিনো ভাইরাসের বিপদ সম্পর্কে ততটা ওয়াকিবহাল ছিলেন না? রাজ্যের সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে অ্যাডিনো  ভাইরাস বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য বেডের অভাব দেখা যাচ্ছে। মঙ্গলবার বেড বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে প্রশাসন। তাই সাধারণ মানুষের বক্তব্য, আরও আগে এ বিষয়ে হাল ধরলে হয়ত এতগুলি শিশুর মৃত্যু হতো না। অনেকেই মনে করছেন অ্যাডিনো ভাইরাস নিয়ে পর্যাপ্ত প্রচার করা হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। তাই শহর তথা গ্রাম বাংলার মানুষ সেভাবে বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নেননি।

এখন অবশ্য নড়ে চড়ে বসতে দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরকে। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ শিশুদের যেন খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না করা হয়। বাইরে থেকে আসার পর সাবান দিয়ে ভাল করে হাত-মুখ না ধুয়ে কেউ যাতে শিশুদের কাছে না যান সেই পরামর্শও দিচ্ছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা।   

মূলত চার বছরের নীচে থাকা শিশুরা এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তার মোকাবিলার  করার মতো স্বাস্থ্য পরিকাঠামো রাজ্য সরকারের আছে কি? চিকিৎসক মহলের একাংশ মনে করছেন আরও আগে এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের পদক্ষেপ করা উচিত ছিল। তাই গভীর সংকটের সময় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এর মোকাবিলা করতে নেমে স্বাস্থ্য দফতর কতটা উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবা রাজ্যবাসীকে দিতে পারে এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × four =