নকশি কাঁথায় স্বপ্ন বোনেন প্রীতিকণা,পদ্মশ্রী পেলেন বাংলার এই কন্যা

নকশি কাঁথায় স্বপ্ন বোনেন প্রীতিকণা,পদ্মশ্রী পেলেন বাংলার এই কন্যা

নয়াদিল্লি: অভাবের সংসার। হাতে অস্ত্র বলতে ছুঁচ-সুতো। তা দিয়েই বুনে চলেন নকশিকাঁথা। অপূর্ব সেই কাজ। অনন্য সেই সৃষ্টির জন্যেই পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হল বাংলার প্রীতিকণা গোস্বামীকে৷ 

আরও পড়ুন- দুর্ঘটনায় আহত কর্মচারীদের পাশে অটোমোবাইল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, চিকিৎসার অর্থও আদায় হল

সোনারপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রীতিকণার হাতের কাজ এখন বিদেশেও সমাদৃত। বিনা পারিশ্রমিকে মহিলাদের সেলাইয়ের কাজও শেখান তিনি। কমলাদেবী কাঁথা সেন্টারের নাম সকলেরই জানা৷ তিনি পদ্মশ্রী পেয়েছেন শুধুমাত্র সেলাইয়ের মধ্যমে শিল্পসৃষ্টির জন্য নয়, নারীর ক্ষমতায়নের জন্যও বটে। দারিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি একাই এগিয়ে যাননি, লড়াই করার সাহস জুগিয়েছেন আরও পাঁচজন মেয়েকেও।

প্রীতিকণার লড়াইটা শুরু হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের আর পাঁচটা মেয়ের মতোই সাদামাটা জীবন তাঁর। মাধ্যমিক পাশ করার কিছুদিনের মধ্যেই বাবাকে হারান তিনি৷ আচমকা বাবার চলে যাওয়ার ধাক্কা সামলে উঠতে হিমশিম খেয়েতে হয়েছিল প্রীতিকণার পরিবারকে। মা-বোনেদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেবেন কী ভাবে, সেই চিন্তাই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল তাঁকে৷ এমন সময় এক বন্ধুর বাড়িতে যান তিনি। তখন মন দিয়ে  সেলাইয়ের কাজ করছিলেন সেই বন্ধু। সেলাই করতে করতেই শাড়িটা রেখে বাইরে যান৷ প্রীতিকণা কী মনে করে সেই শাড়িতেই খানিকটা সেলাই করে ফেলেন। বন্ধু ফিরে এসে জিজ্ঞেস করতেই অস্বস্তিতে পড়েন প্রতীকণা৷ সঙ্কোচে অস্বীকার করতে থাকেন। তবে ওই বন্ধু সেদিন বুঝে নিয়েছিলেন প্রীতিকণার হাতের জাদু।

বাবার মৃত্যুর পর মা এবং পাঁচ বোনের সংসারে নেমে আসে চরম দারিদ্র্য। জ্যেঠু তাঁকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যান। সেখানেই মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন প্রীতিকণা। সেই সঙ্গে বেশ অল্প বয়সেই সেলাইয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর৷ বান্ধবী রমা দাসের সেলাই তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল। রমা সেলাইয়ের কাজের জন্য অনেক অর্ডার পেতেন। সেই বন্ধুই তাঁকে প্রস্তাব দেন কলকাতা গিয়ে কাঁথা স্টিচের কাজ আনতে। যোগাযোগও করিয়ে দেন একটি দোকানের সঙ্গে। সেখানে কাঁথা স্টিচের কাজের শাড়ি বিক্রি করা হয়। প্রীতিকণা সেখানে গিয়ে কথা বলেন৷ কিন্তু বাড়িতে শাড়ি এনে কাজ করার জন্য ৫০টাকা জমা রাখতে হয়। তাঁর কাছে ছিল মাত্র ৩০ টাকা। সেলাইয়ের কাজে আগ্রহ দেখে মালকিন তাঁকে প্রস্তাব দেন দোকানে বসেই যেন তিনি কিছু একটা করে দেখান। সেদিন তাঁর হাতের কাজ দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন দোকানের মালকিন। পিস হিসাবে সেলাই করার কাজ দেন তিনি। সেই থেকে শুরু। তারপর ১৫ বছর ধরে চলে সেই সেলাইয়ের কাজ।

এরমধ্যেই ১৯৭৭ সালে বিয়ে হয় প্রীতিকণার৷ তবে পড়াশোনা বন্ধ করেননি। ভর্তি হন সিটি কলেজে। ১৯৯০ সালে ওয়েস্টবেঙ্গল ক্রাফট কাউন্সিল থেকে নকশিকাঁথার কাজের অর্ডার আসে তাঁর কাছে। ২০০১ সালে অনবদ্য সৃষ্টির জন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল কালাম আজাদের কাছ থেকে জাতীয় পুরষ্কার পান। তাঁর কাকা পণ্ডিত নিখিল ঘোষও সংগীত বিভাগে পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন। এবার রাষ্ট্রপতি দৌপদী মুর্মুর হাত থেকে পদ্মশ্রী পেলেন প্রীতিকণা৷ নকশিকাঁথার মতো হাতের কাজ কীভাবে বিকল্প আয়ের রাস্তা হতে পারে, ছাত্রীদের সেই দিশাও দেখিয়ে চলেছেন বাংলার গর্ব প্রীতিকণা গোস্বামী।