এবার ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকেও বঞ্চিত আফগান মহিলারা, নয়া ফতোয়া তালিবানদের

এবার ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকেও বঞ্চিত আফগান মহিলারা, নয়া ফতোয়া তালিবানদের

কাবুল: এক এক করে সমস্ত মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতার রাস্তা বন্ধ হচ্ছে আফগান মহিলাদের। সৌজন্যে তালেবান সরকার। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান পুনর্দখলের পর থেকেই তালিবানদের হাত ধরে সেদেশে স্থানীয় বাসিন্দাদের দুরাবস্থা যেন ফেরত এসেছে। তবে এই মুহূর্তে সবথেকে অসহায় অবস্থা সেই দেশের মহিলাদের। তালিবানরা সরকার গঠনের পর থেকেই এক এক করে সব স্বাধীনতাই কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের কাছ থেকে। প্রথমে শিক্ষার অধিকার, পরে কর্মসংস্থানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন আফগান মহিলারা। এমনকি কোনও পুরুষ আত্মীয় ছাড়া তাঁদের বিমানে ওঠা পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে তালিবান সরকার। কিন্তু সম্প্রতি জানা যাচ্ছে মহিলাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, হেরাত প্রদেশের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট, যারা সমগ্র আফগানিস্তানে ড্রাইভিং স্কুল এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়গুলি পরিচালনা করে তাদের তালিবান সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আগামী দিনে কোনও মহিলাকেই যেন গাড়ি চালানোর লাইসেন্স না দেওয়া হয়।

ওই স্কুলের ইন্সট্রাক্টর নিজেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তালিবান সরকারের তরফ থেকে আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আগামী দিনে যেন কোনও মহিলার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু না করা হয়। এমনকি তাঁদের যেন গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণও না দেওয়া হয় বলে সরকারি নির্দেশ পেয়েছি আমরা।

তবে এই ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত তালিবান সরকারের তরফ থেকে কোনও সরকারি বিবৃতি জারি করা হয়নি। উল্লেখ্য ২০২১ সালের আগস্ট মাসে যখন আফগানিস্তান পুরোপুরিভাবে পুনরায় তালিবানের দখলে চলে যায় তখন অবশ্য সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা, বিশেষ করে নারী স্বাধীনতা নিয়ে একগুচ্ছ ইতিবাচক বার্তা দিতে দেখা গিয়েছিল তালিবানদের। তার মধ্যে অন্যতম ছিল তালিবান মহিলাদের মৌলিক অধিকার, স্বাধীনতা এবং তাঁদের শিক্ষার অধিকার। কিন্তু বাস্তবে সম্পূর্ণ উল্টো কাজই করেছে তাঁরা। ২০২১-এর আগস্ট মাস থেকেই বন্ধ হয়েছে আফগানিস্তানের সমস্ত বালিকা বিদ্যালয়। মাঝে যদিও ২০২২-এর ফেব্রুয়ারি মাসে একবার একদিনের জন্য খুলেছিল স্কুল কিন্তু তারপরেই তালিবানি ফতোয়ায় পুনরায় তালা ঝুলেছে স্কুলের দরজায়। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে যদিও এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি তবে সেক্ষেত্রে প্রচুর কঠোর নিয়ম-নীতি মেনে তবেই শিক্ষা অর্জন করার সুযোগ পাচ্ছেন আফগান মহিলারা।

এছাড়াও কর্মসংস্থান, স্বাভাবিক জীবনযাপন, বাড়ির বাইরের স্বাধীনভাবে হাঁটাচলা করা সর্বক্ষেত্রেই বারবার তাঁরা তালিবান সরকার দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই বিষয়গুলি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ মহল। এমনভাবে চলতে থাকলে আফগানিস্তানের সভ্যতা যে আবারও কয়েকশো বছর পিছিয়ে যাবে এমনটাই মনে করছেন অনেকে। এদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তালিবানি জমানায় চাকরি খুইয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ফলে পেট চালাতে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া আর কোনও রাস্তাই খোলা নেই অধিকাংশের কাছে। সব মিলিয়ে কার্যত অরাজকতা এবং অচলাবস্থায় বিদ্যমান তালিবান শাসিত এই দেশে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *