নিজস্ব প্রতিনিধি: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিলম্বিত বোধোদয়! গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুরে ভোট লুট করে তৃণমূলকে জেতানো হয়েছিল বলে এবার নিজেই স্বীকার করে নিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে সেই সময় উত্তর দিনাজপুরের পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু। তবে কি রাজনৈতিক সমীকরণ বদলেছে বলেই শুভেন্দু সেসব কথা নিজেই তুলে ধরে ভুল স্বীকার করে নিচ্ছেন? বুধবার কালিয়াগঞ্জের সভায় শুভেন্দু বলেন, ”গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই জেলায় গণনা কেন্দ্রে ভোট লুট হয়েছিল। তখন আমি তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ছিলাম। জেলা পরিষদের ২৬টি আসনের মধ্যে আট- দশটা আসনে তৃণমূল জিতেছিল। মাঝরাতে জেলাশাসক আয়েশা রানি আমাকে ফোন করে বলেন বিজেপিকে দুটো ছেড়ে বাকিটা করে দিলাম৷” সেই সঙ্গে বলেন, “পঞ্চায়েতে আর ভোট লুঠ করতে দেব না। আমি আপনাদের পাশে আছি। মনে রাখবেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে আমি প্রাক্তন করেই ছাড়ব”। গত লোকসভা নির্বাচনের পর কালিয়াগঞ্জ বিধানসভায় উপনির্বাচন হয়। সেখানে তৃণমূলের জয়ের প্রধান কান্ডারী ছিলেন শুভেন্দু। এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলে শুভেন্দু বলেন,” আমি উত্তর দিনাজপুর জেলার মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। লোকসভা ফলের নিরিখে কালিয়াগঞ্জে তৃণমূল ৫০ হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে ছিল। আমি নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীকে দু হাজারের বেশি ভোটে জিতিয়েছিলাম। ভুল করেছিলাম। আগামী ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুর জেলায় এসে সুদে আসলে তা ফিরিয়ে দেব বলে কথা দিচ্ছি৷”
শুভেন্দুর এমন বক্তব্যে এটাই স্পষ্ট হল যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে ভোট লুটের অভিযোগ ওঠে সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে তিনিও তার শরিক ছিলেন। তবে কি অবস্থান বদলে গিয়েছে বলেই শুভেন্দু সেসব কথা স্বীকার করে এখন জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছেন? এটাকে বিলম্বিত বোধোদয় ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, শুভেন্দু জেনে শুনে সেই কাজ করেছিলেন কেন? তখন তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়নি বলেই এমন অন্যায় তিনি করেছিলেন? শুধু উত্তর দিনাজপুর নয়, সেই সময় আরও কয়েকটি জেলার পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু। তবে কি সেই সমস্ত জেলাতেও এমন কাজকর্মের সাক্ষী ছিলেন শুভেন্দু? এই চর্চা যথারীতি শুরু হয়েছে। আসলে রাজনীতি এমনটাই। রাজনীতিকে বলা হয় ‘সম্ভাবনার শিল্প’। কখন যে সব কিছু বদলে যায় সেটা কেউই আগেভাগে বলতে পারেন না। যথারীতি শুভেন্দুও এই সার্কিটের বাইরে কিন্তু নন। তাই দেরিতে হলেও আজ হয়ত শুভেন্দুর এমন উপলব্ধি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশে এই রাজনীতিটাই চলছে, এবং সেটা যে আগামী দিনেও চলতে থাকবে তা স্পষ্ট।