শুধু মহিলারা নয়, রুশ সেনার হাতে ধর্ষিত হচ্ছে ইউক্রেনীয় কিশোর ও যুবকরাও

শুধু মহিলারা নয়, রুশ সেনার হাতে ধর্ষিত হচ্ছে ইউক্রেনীয় কিশোর ও যুবকরাও

কিয়েভ: দেখতে দেখতে ৭১ দিন পার করল ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যকার সংঘাত। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে বিশেষ সামরিক অভিযানের নামে ইউক্রেনে যে আক্রমণ শুরু করেছে রুশ বাহিনী তা এখনও থামার নাম নেয়নি। রাশিয়ার জোরালো আক্রমণে ইতিমধ্যেই  মৃত্যুপুরীর রূপ নিয়েছে ইউক্রেনের রাজধানীর কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি। প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে রুশ সেনার আক্রমণে কীভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে ইউক্রেনের সাধারন বাসিন্দাদের জীবন। এমতাবস্থায় আবার রাশিয়া সেনা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন ইউক্রেনীয় বাসিন্দারা।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের যে সমস্ত নগর, গ্রাম দখল করেছে পুতিন বাহিনী সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার চালাচ্ছে সেনা আধিকারিকরা। তাঁদের লাগাতার গণধর্ষণ পর্যন্ত করা হচ্ছে বলে খবর। এমতাবস্থায় সামনে এল আরও একটি ভয়ানক খবর। জানা যাচ্ছে রুশ বাহিনীর হাতে শুধু স্থানীয় কিশোরী কিংবা মহিলারাই নয় ধর্ষিত হচ্ছেন ইউক্রেনের স্থানীয় যুবক এবং কিশোররাও। জাতিসংঘ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই এমন বেশ কিছু রিপোর্ট জমা পড়েছে যেখানে জানা গিয়েছে ইউক্রেনের সেনা আধিকারিকরা স্থানীয় কিছু কিশোরকে ধর্ষণ করেছে। সেই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি জুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেন আন্তর্জাতিক একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘আমি রিপোর্ট পেয়েছি ইউক্রেনে পুরুষ এবং ছেলেদের উপরেও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। তবে এখনও এই অভিযোগের সত্যমিথ্যা কিছুই প্রমাণিত হয়নি। বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন, যদি এই রিপোর্টটি সত্যি বলে প্রমাণিত হয় তাহলে আগামী দিনে তদন্তের কাজ চালানো আরো বেশী কঠিন হবে। কারণ কলঙ্কের কারণে ধর্ষণের রিপোর্ট করা মহিলাদের পক্ষে বেশ কঠিন। কিন্তু পুরুষ কিংবা ছেলেদের পক্ষে এই ধরনের রিপোর্ট করা প্রায় অসম্ভব বলা চলে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষরা এ বিষয়ে মুখ খোলেন না। কিন্তু বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের জন্য নিরাপদ জায়গায় তৈরি করতে হবে খুব শীঘ্র।’

উল্লেখ্য, ইউক্রেনে রাশিয়ার সংঘাত শুরুর পরেই যখন ইউক্রেনীয় স্থানীয় মহিলাদের উপর অত্যাচারের এক একটি প্রতিবেদন সামনে আসতে শুরু করে তখনই এই বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন প্রমিতা। তিনি বিষয়টিকে হিমবাহের অগ্রভাগ বলেও দাবি করেছিলেন। সেইসঙ্গে যুদ্ধ অপরাধীদের খুঁজে বের করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছিলেন তিনি সেই সময়। অন্যদিকে এই একই কথা বলেছেন ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল ইরিনা  ভেনেডিক্তভা। মঙ্গলবার একটি রিপোর্টে তিনি বলেন, রাশিয়ান সেনার হাতে শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী থেকে পুরুষ সকল বয়সের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে এবং সে ক্ষেত্রে তাঁর অফিস রাশিয়ান সেনাদের দ্বারা যারা এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন তাদের কাছ থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করছে। এই প্রসঙ্গে তিনি এও বলেছেন, ‘এই সমস্ত ঘটনা যাদের সাথে রয়েছে তাদের অধিকাংশই দেশ ছেড়েছেন। যারা আছেন তাদের অধিকাংশই আবার এই অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু পাবলিক প্রসিকিউটর এবং তদন্তকারীদের বিশেষ একটি দল রাশিয়ান বাহিনীর এই সমস্ত অপরাধ প্রসঙ্গে প্রমাণ সংগ্রহ করছে।’

ইলিনা আরও জানিয়েছেন, ধর্ষণ, বন্দুকের গুলিতে হামলা, শিশুদের সামনেই তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ধর্ষণ করা, এই ধরণের অপরাধগুলির কথা মাথায় রাখলে এক একটি ভয়াবহ অপরাধের রিপোর্ট তৈরি হবে। ইতিমধ্যে এমন ২৫ জন নারীর সন্ধান মিলেছে যাদের বুচার একটি বেসমেন্টে রাখা হয়েছিল এবং তাদের নিয়মিত ধর্ষণ করত রুশ বাহিনীর আধিকারিকরা। এছাড়া গণকবরের মহিলাদের মৃতদেহগুলিও ময়নাতদন্ত করে প্রমাণ মিলেছে যে রাশিয়ান বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার আগে কয়েকজনকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। সমস্ত তথ্য প্রমাণ সামনে এনে একটি ভয়াবহ চিত্র তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে জানা যাচ্ছে যে সমস্ত রাশিয়ান সৈন্য আধিকারিক এই ধরনের যৌন সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত তাদের কয়েকজনকে ইতিমধ্যে ইউক্রেনে তদন্তকারীরা চিহ্নিত করেছে এবং ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ওই সমস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 9 =