কবে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’? কেন এই নাম? কে-ই বা দিল? বিষদে জানালেন আবহবিদরা

কবে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’? কেন এই নাম? কে-ই বা দিল? বিষদে জানালেন আবহবিদরা

4eb1c56e001f9b5959789bea0a4eb1bf

 কলকাতা: ফের বাংলার আকাশে দুর্যোগের অশনি সঙ্কেত। ধেয়ে আসতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়৷ যা আঘাত হানতে চলেছে বাংলা এবং ওড়িশার বুকে৷ তেমনই পূর্বাভাস দিল্লির মৌসম ভবনের। কিন্তু, কবে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়? 

আবহাওয়া সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মডেল বিশ্লেষণ করে আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকেই ঘূর্ণিঝড়ের আভাস দিয়েছিল দিল্লির মৌসম ভবন। তাদের পূর্বাভাস, আগামী সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়। তার আগে শক্তিশালী নিম্নচাপ সৃষ্টি হবে৷ যা শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে এবং ধেয়ে আসবে  বাংলা এবং ওড়িশার দিকে। 

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, আগামী ৯ মে অর্থাৎ মঙ্গলবার নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হতে চলেছে। আগামী শনিবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টির মধ্যে দিয়েই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। রবিবারই ঘূর্ণাবর্তটি শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে। সোমবার আরও শক্তি বৃদ্ধি করে সেটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। তার পরের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার উত্তর অভিমুখে অগ্রসর হয়ে সে, তা নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে যথেষ্ট কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

বলে রাখা ভাল, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকে। এর আগে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এর নামকরণ করেছিল তাইল্যান্ড। আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র নামকরণ করেছে আরব সাগরের পাড়ে অবস্থিত দেশ ইয়েমেন। যদিও এই ‘মোকা’ শব্দের আক্ষরিক কোনও অর্থ নেই। ইয়েমেনের বন্দর শহর ‘মোখা’ যার উচ্চারণ মোকা, তার নামেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে৷ ১৯ শতক পর্যন্ত মোখাই ছিল ইয়েমেনের রাজধানী সানার প্রধান বন্দর। এই শহরেই চাষ করা হয় বিখ্যাত কফি ‘মোকা’৷ এই কফির নামও এসেছে শহরের নাম থেকেই। দীর্ঘ দিন মোখা বন্দর দিয়েই দেশ-বিদেশে রফতানি করা হত ‘মোকা’ কফি৷ 

এখন সকলের নজরে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’৷ এ প্রসঙ্গে মৌসম ভবনের চেয়ারম্যান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, “একটি বিশেষ মডেল অনুযায়ী মনে করা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে। আমরা এর উপর নজর রাখছি। নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করা হবে।’’

যদিও ‘মোকা’ নিয়ে নিশ্চিত নয় আলিপুর আবহাওয়া দফতর৷ তবে মৌসম ভবন জানিয়ে দিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় যদি আসে তবে  আর বেশি দেরি নেই। এই সপ্তাহান্তের শেষলগ্ন থেকেই শুরু হয়ে যাবে তার প্রস্তুতি৷ আর আগামী ৬ মে থেকে ১০ মে-র মধ্যে ধেয়ে আসবে ঘূর্ণিঝড়৷ 

হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি ঘূর্ণাবর্তের জেলে উপকূলবর্তী রাজ্যগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবল গতিতে বইবে ঝোড়ো হাওয়া৷ তামিলনাড়ু, ওড়িশার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের উপকূলেও আঘাত হানতে পারে মোকা৷ বাংলার বুকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে বলেই আবহবিদদের সঙ্কেত।

আবহাওয়াবিদদের একাংশের মতে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ সম্পর্কে আপাতত যে ইঙ্গিত মিলছে, তাতে উত্তর ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ- মায়ানমার উপকূলের যে কোনও অংশের উপর দিয়ে ‘মোকা’ স্থলভূমিতে ঢুকবে৷ তাই আগাম সতর্কতা অবলম্বন করেই ঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ওড়িশা। মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের বসেছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক।