‘চিপ হিট অফিসার’ নিয়োগ করল ঢাকা, বাংলাও কি ভাবছে? কী কাজ তাঁদের?

‘চিপ হিট অফিসার’ নিয়োগ করল ঢাকা, বাংলাও কি ভাবছে? কী কাজ তাঁদের?

কলকাতা: চাকরি বা উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে থাকেন৷ কিন্তু, এর বাইরেও আজকাল বহু মানুষের মধ্যে বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ যার অন্যতম কারণ হল জলবায়ু ও আবহাওয়ার পরিবর্তন। তাই পরিবেশের দিক থেকে স্বস্তিদায়ক দেশগুলিতে বাড়ছে জনসংখ্যা৷ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশের মতো দেশের নাগরিকদের মধ্যে এই প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে৷ 

তবে দেশ ছেড়ে অন্যত্র ঠাঁই নেওয়াটা  জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুতর সমস্যা সমাধানের উপায় হতে পারে না। কিছু ধনী পরিবার হয়তো বিদেশে গিয়ে সুস্থ জীবন বেছে নিতে পারবেন৷ কিন্তু বাকিরা? তাদের জন্য নিজের শহর বা এলাকায় সহনশীল জলবায়ু, আবহাওয়া বজায় রাখাটাই মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু, আবহাওয়া পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে৷ এর সিংহভাগ দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু শহর কিংবা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা, জীবন ধারনের নতুন পথ বেছে নেওয়ার উপায় বাতলানোর জন্য প্রয়োজন দক্ষ পেশাদার জনসংযোগ বিশেষজ্ঞের৷ যিনি একধারে সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হবেন। এমন পেশাদারদের কথা মাথায় রেখেই ইওরোপ, আমেরিকায় চালু হয়েছে ‘চিপ হিট অফিসার’ পদ৷ যার বাংলা করলে হয় শীর্ষ তাপনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ এই পদে নিয়োগ করল৷ প্রথম বুশরা আফরিন৷ 

এই পদের নামকরণ করেছে আমেরিকার অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টার। তাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষকে বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদ থেকে থেকে রক্ষা করা। বুশরা বলেন, কীভাবে গরমের মধ্যে শিশু, গর্ভবতী, বয়স্করা সুস্থ থাকতে পারেন তা সাধারণ মানুষ জানেন না। সেই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে৷ 

গত এপ্রিল মাসে ২৬ দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়৷ এদিন ঢাকা যখন গরমে হাঁসফাঁস করেছে, তখন কলকাতার মানুষেরও দুর্বিষহ অবস্থা৷ তাপপ্রবাহের আগুন পুড়ছে প্রায় গোটা বাংলা৷ দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহের নজির খুব একটা নেই এই শহরে৷ কিন্তু এবার তেমনই হল৷ এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চিপ হিট অফিসার নিয়োগ করেছে৷ পশ্চিমবাংলাও কি হিট অফিসার নিয়োগের কথা ভাবছে?

এ প্রসঙ্গে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি। পুরসভার উদ্যান ও পরিবেশ বিভাগের এক অফিসার বলেন, শহরে নিয়মিত গাছ লাগানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়। রাজ্য সরকারের পরিবেশ দফতর থেকে পরিবেশ সংক্রান্ত নানা পরামর্শ দেওয়া হয়। পুরসভা সেই পরামর্শগুলি কার্যকর করার চেষ্টা করে। আলাদা করে কোনও আধিকারিককে উষ্ণতা সংক্রান্ত বিপদ মোকাবিলায় নিয়োগের প্রস্তাব এখনও পর্যন্ত নেই৷ 

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ করা হয়। এঁদের মূল কাজ তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। এর পাশাপাশি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পও গ্রহণ করে থাকেন ‘চিফ হিট অফিসার’রা। এর মধ্যে রয়েছে বৃক্ষরোপণ, ছায়া রয়েছে এমন স্থানের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি। তাপের কারণে যে সব রোগ হয়, তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে থাকেন ‘চিফ হিট অফিসার’রা৷ এই বিষয়ে সরকারের সবকটি দফতরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন এই আধিকারিক।বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে এই কাজ করা এবং তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের  দায়িত্বও অফিসারের। চিফ হিট অফিসারের আওতায় যেসব কাজ হবে, সেগুলোর অর্থ দেবে আর্শট-রক। এছাড়া তাঁর বেতনসহ সব খরচ তারাই দেবে।

দেশের সব শহরের তাপমাত্রা সমান হয় না। যে শহরে অধিক কলকারখানা, দফতর, শপিং মল রয়েছে, সেখানে বাতানুকূল যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে তাপমাত্রাও বেশি থাকে। এ সব এলাকায় গাছপালাও কম দেখা যায়। এই সব আরবান হিট আইল্যান্ড বা উচ্চ তাপমাত্রা বিশিষ্ট অঞ্চলের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন ‘চিফ হিট অফিসার’।