‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবি নিষিদ্ধ নিয়ে নতুন করে মেরুকরণের চেষ্টায় বিজেপি?

‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবি নিষিদ্ধ নিয়ে নতুন করে মেরুকরণের চেষ্টায় বিজেপি?

কলকাতা:  ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবি নিষিদ্ধ নিয়ে নতুন করে মেরুকরণের চেষ্টায় বিজেপি?  বিতর্ক উঠেছে বলেই ছবিটি নিয়ে আলোচনা বেশি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা! ছবি প্রদর্শনে সত্যিই কি বিঘ্নিত হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি? অবশেষে বাংলায় নিষিদ্ধ ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।

পশ্চিমবঙ্গে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সিনেমাটির প্রদর্শন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে এই ঘোষণা করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় শান্তি-সৌহার্দ্য বজায় রাখতে ছবি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যথারীতি এতে সোচ্চার হয়েছেন ছবির নির্মাতা বিপুল শাহ। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই  সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন। বিপুল বলেন, “আমরা আইনের দ্বারস্থ হব। এ বিষয়ে যে আইন আছে আমরা তার সাহায্যেই এই নির্দেশের বিরুদ্ধে লড়াই চালাব।”

 

ছবিটির বিষয়বস্তু নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি একাধিক অ-বিজেপি সরকার। তা নিয়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরির’ পরিচালক সুদীপ্ত সেন ও অভিনেত্রী আদা শর্মা জানিয়েছেন দীর্ঘ গবেষণার ভিত্তিতেই এই ছবি নির্মিত হয়েছে। তাই ছবিটির সমালোচনা করার আগে সেটি দেখবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তাঁরা। এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম শালিনী উন্নিকৃষ্ণণ। সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন আদা শর্মা। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু তরুণী শালিনী ধর্ম পরিবর্তনের পরে হয়ে ওঠেন ফতিমা। শুধু তাই নয়, এরপর তাঁকে সিরিয়ার জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। এভাবেই ছবিতে এক অসহায় নারীর জীবন সংগ্রামের কাহিনি উঠে এসেছে। কীভাবে তাঁর ধর্ম পরিবর্তন করা হয়েছে সেই কাহিনি ছবিতে তুলে ধরেছেন পরিচালক সুদীপ্ত সেন। শুধু হিন্দু নয়, খ্রিস্টান মহিলাদেরও ধর্ম পরিবর্তন করা হয়েছে বলে ছবিতে দেখানো হয়েছে। তবে পরিচালক সুদীপ্ত সেন কোনও ভাবেই ছবিটিকে ইসলামবিরোধী বলতে চান না। তাঁর কথায় এটা শুধুমাত্র একটি সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ছবি। সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করেই এই ছবি নির্মিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন সুদীপ্ত।

 

এদিকে ছবি নিষিদ্ধ করার কথা ঘোষণা হতেই আসরে নেমেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা এই সিদ্ধান্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেছেন। প্রশ্ন উঠছে ছবি নিষিদ্ধ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি কি নতুন করে রাজ্যে মেরুকরণের চেষ্টা করবে? ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে কর্ণাটকের নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে ছবিটির প্রশংসা করে প্রচার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। অভিযোগ এভাবে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করছে বিজেপি। আর একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গেও গেরুয়া শিবির সেই চেষ্টা করবে বলে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছে।

ইতিমধ্যেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রশ্ন, “মুখ্যমন্ত্রী কি জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-আইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল?” রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপকে ‘নির্লজ্জ তোষণ’ বলেছেন। এদিন শুভেন্দু টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমি যত দূর জানি, কেরলে কীভাবে মহিলাদের মগজধোলাই করেন কট্টরপন্থী ধর্মগুরুরা, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে দ্য কেরালা স্টোরি ছবিটি। ছবিতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে কেরলে মহিলাদের ধর্মান্তরিত করে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সিরিয়ায় আইএস-আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়। আইএস-আইএস এবং তাদের কার্যপদ্ধতির বিরুদ্ধাচারণ করে তৈরি হয়েছে ছবিটি। তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি আইএস-আইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল?’’

 

এর পাশাপাশি  তিনি টুইটে আরও লিখেছেন,  ‘‘এই ছবি দেখানো হলে কেন  আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে? এই ছবি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত। আর যদি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে না পারেন, তা হলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।’’ সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অভিনেত্রী শাবানা আজমির একটি টুইটের প্রসঙ্গ তোলেন বিরোধী দলনেতা। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির পাশেই দাঁড়িয়েছেন শাবানা। যারা ছবিটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কথা বলছেন তাঁদের বিরোধিতা করেছেন অভিনেত্রী। সেই প্রসঙ্গেরও অবতারণা করেছেন শুভেন্দু।

 

এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা ছবিটি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে বলেই তা নিয়ে জনমানসে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ছবিটি যদি রাজ্যে নিঃশব্দে মুক্তি পেয়ে প্রদর্শিত হতো তাহলে সেটি কত মানুষ দেখতেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে তাঁরা মনে করছেন ছবি প্রদর্শন ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা কম। যদিও উল্টো মতও রয়েছে। সেই অংশ মনে করছেন ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে অশান্তি হলে তা আটকাবে কে? রাজ্য সরকার তাই আগেভাগেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে। আর এই পুরো বিষয়গুলি নিয়েই নির্বাচনে মেরুকরণের সম্ভাবনা দেখছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। কারণ এর আগেও বিজেপি একাধিক সিনেমা নিয়ে প্রচারে নেমেছিল। তাই ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র অভিঘাত রাজ্য  রাজনীতিতে আদৌ পড়ে কিনা এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 3 =