সিদ্দারামাইয়ার শপথে কর্ণাটকে কেন গেলেন না মমতা? রাহুলকে নিয়ে আপত্তি রয়েছে বলেই কি এই সিদ্ধান্ত?

সিদ্দারামাইয়ার শপথে কর্ণাটকে কেন গেলেন না মমতা? রাহুলকে নিয়ে আপত্তি রয়েছে বলেই কি এই সিদ্ধান্ত?

 

কলকাতা: কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে বিস্তর টানাপড়েন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া। সেই সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন কর্ণাটক প্রদেশ সভাপতি ডিকে শিবকুমার। আর সেই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েও হাজির থাকছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবর্তে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসেবে বেঙ্গালুরু যাচ্ছেন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার।  মমতা যাতে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন সেই জন্য তাঁকে নিজেই ফোন করেছিলেন সিদ্দারামাইয়া ও শিবকুমার। এরপরেও মমতার অনুপস্থিতি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

এ বিষয়ে  তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইটে জানিয়েছেন,  ‘‘কর্ণাটকের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং তাঁর অন্য সহকর্মীরা সর্বভারতীয় তৃণমূলের চেয়ারপার্সন তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শনিবার শপথ অনুষ্ঠানের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি তাঁদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শপথের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য লোকসভায় তৃণমূলের সহকারি দলনেত্রী কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে মনোনীত করেছেন তিনি।’’

২০১৮ সালে কংগ্রেসের ৮০ জন বিধায়কের সমর্থন নিয়ে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন জেডিএস নেতা এইচডি কুমারস্বামী। তাঁর শপথে গিয়েছিলেন মমতা। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা হল, আগের বার কর্ণাটকে আঞ্চলিক দলের কেউ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বলেই মমতা হাজির ছিলেন। কিন্তু এবার একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে কংগ্রেস। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীর শপথে খোদ তৃণমূল সুপ্রিমোর হাজির থাকা মানে হাত-শিবিরকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া। যেটা একেবারেই করতে চায় না তৃণমূল।

তাই কর্ণাটকে এবার পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করলেও একবারের জন্যও কংগ্রেসের নাম উচ্চারণ করেননি। এমনকী রাহুল গান্ধী, সোনিয়া গান্ধীদের নামও বলতে শোনা যায়নি তাঁকে। আসলে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী জোটের রাশ কোনও ভাবেই যাতে কংগ্রেসের হাতে না যায় সেই লক্ষ্যেই মমতার এমন অবস্থান বলে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের আগে কলকাতায় এসে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন কুমারস্বামী। তাই এটা স্পষ্ট কোনও ভাবে যদি কুমারস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হতেন তখন তাঁর শপথে হয়ত হাজির হতেন মমতা।

সিদ্দারামাইয়ার শপথে ডিএমকে, এনসিপি, সিপিএম, জেডিইউ, আরজেডি প্রভৃতি বিজেপি বিরোধী দলগুলির নেতাদের হাজির থাকতে দেখা যাবে। কিন্তু সেই মঞ্চে নিঃসন্দেহে প্রচারের আলো সবচেয়ে বেশি থাকবে রাহুল গান্ধীর উপরে। রাহুল তথা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব অনুষ্ঠানে মধ্যমণি হিসেবেই যে থাকবেন, তা স্পষ্ট। রাজনৈতিক মহল মনে করে গত কয়েক বছর ধরে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে তৃণমূলের ‘অ্যালার্জি’ রয়েছে। বিরোধী জোটের রাশ রাহুলের হাতে যাক সেটা কোনও ভাবেই চায় না তৃণমূল। তবে কি সেই কারণেই বেঙ্গালুরু গেলেন না মমতা? এর আগে দেখা গিয়েছে এই ধরনের বিরোধী মঞ্চে মমতা কার্যত ‘মধ্যমণি’ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছেন। কিন্তু কর্ণাটকে মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর শপথে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই কি নিজেকে এভাবে সরিয়ে নিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী? এই প্রশ্ন তুলছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। তাই কর্ণাটকে মমতার না যাওয়া নিয়ে বহু প্রশ্ন থেকেই গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − 3 =