কয়েকদিন আগেই ৫৭ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল আশীষ বিদ্যার্থীর নাম। সেই ধারায় বজায় থাকলো। ৭৪ বছর বয়সে এবার বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন লক্ষণ শেঠ। যিনি কিনা একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপ বামনেতা হিসেবে পরিচিত। তিনিও শুরু করলেন জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস। সাত পাকে বাঁধা পড়লেন বঙ্গ রাজনীতির এই বিতর্কিত নেতা।
আপাতত আইনি মতেই বিয়ে সেরেছেন লক্ষণ। ২৪ শে মে চার হাত এক হয়। তবে বিয়ের পরপরই স্ত্রীর পরিচয় সামনে আনতে চাননি তিনি। সম্প্রতি আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লক্ষণ এ ব্যাপারে জানিয়েছেন, “বিয়ে করেছি, ব্যস! কাকে করেছি কী করে জানাবো? নিজের এলাকায় রিসেপশন করব তখন জানতে পারবেন সকলে। এখনও রিসেপশনের তারিখ ঠিক হয়নি, ঠিক হলেই জানাবো”।
হ্যাঁ বিয়ের পরপর এভাবেই নিজের দ্বিতীয় বিয়ের প্রসঙ্গে মত পোষণ করেছিলেন দাপুটে এই বামনেতা। তবে বিয়ের কথা স্বীকার করলেও নতুন স্ত্রীর পরিচয় অবশ্য গোপন রেখেছিলেন। শেষপর্যন্ত নবদম্পতির মালাবদল এবং বিয়ের পরের মুহূর্তের বেশ কিছু ছবি সামনে চলে আসে। সামনে আসে নববধূর পরিচয়ও।
একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে মালাবদল করেন লক্ষণ। যার সঙ্গে দ্বিতীয়বার ছাদনাতলায় বসলেন তাঁর নাম মানসী দে। কলকাতার বাসিন্দা ৪২ বছর বয়সী মানসী। মানসী শহরেরই একটি পাঁচতারা হোটেলে শীর্ষ পদে কর্মরতা। এক পরিচিতির মাধ্যমে দুজনের আলাপ। সেই আলাপ থেকেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন লক্ষণ-মানসী।
এর আগে ১৯৭৯ সালে তমালিকা পণ্ডা শেঠের সঙ্গে বিয়ে হয় লক্ষ্মণের। স্রেফ হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান নয়, ২০০৬ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত মহিষাদলের বিধায়ক ছিলেন তমালিকা। বলা যায়, রাজনীতিতে লক্ষণের ‘যোগ্য সহধর্মিনী’ ছিলেন তমালিকা। একসময় হলদিয়ায় বিশাল গণবিবাহের আয়োজন করতেন এঁরা দুজনে। লক্ষণকে সিপিএম যখন বহিষ্কার করেন তখন তমালিকাও দল ছেড়ে দেন। এরপর ২০১৫ সালে স্বামীর তৈরি ‘ভারত নির্মাণ’ দলে যোগ দেন। কিন্তু তার পরের বছরই অর্থাৎ ২০১৬ সালে তিনি প্রয়াত হন। শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার ভুগছিলেন তিনি। লক্ষ্মণ এবং তমালিকার দুই ছেলেও রয়েছে।
বাবার দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে পারছেন না তমালিকা- লক্ষনের দুই ছেলে। জানা যায় এই বিয়ে নিয়ে তাদের ঘোর আপত্তি ছিল। পরিবারে সেই নিয়ে অশান্তিও চলছে। তবে সেসব কিছুকে তোয়াক্কা না করেই দ্বিতীয়বার গাঁটছড়া বাঁধলেন তিনবারের বিধায়ক, সাংসদ লক্ষণ। তমলুক থেকে তিন বার সাংসদ হয়েছিলেন এই লক্ষ্মণ শেঠ। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে তৎকালীন দাপুটে সিপিএম সাংসদকে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের শুভেন্দু অধিকারী। ২০১৪ সালে লক্ষ্মণকে বহিষ্কার করে সিপিএম। এর পর তিনি নিজের একটি দল গঠন করেন। যদিও সেই দল ছেড়ে লক্ষ্মণ পরে যোগ দেন বিজেপিতে। ২০১৮ সালে বিজেপিও তাঁকে বহিষ্কার করে। এর পর ২০১৯ সালে কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি।
বর্তমানে তমলুকে নিজের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে। ‘আইকেয়ার’ নামের সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালান ‘হলদিয়ার শেঠ’। খুব শীঘ্রই রিসেপশন পার্টি দিতে চলেছেন লক্ষণ। জানা গিয়েছে, কলকাতায় প্রীতিভোজ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান করবেন। সেখানে তার দল কংগ্রেস ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। এরপর নিজের শহর হলদিয়াতেও বৌভাতের অনুষ্ঠান করার কথা রয়েছে।