পঞ্চায়েতের দিন ঘোষণার পর থেকেই উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদ। শুক্রবার মনোনয়নের প্রথম দিনে রক্ত ঝরেছিল খড়গ্রামে, কংগ্রেস কর্মীকে গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে। শনিবার, মনোনয়নের দ্বিতীয় দিনেও বাদ গেল না অশান্তি। মনোনয়ন পর্বে ডোমকলে সামনে এল একেবারে হাড়হিম করা ছবি। বিরোধীদের মনোনয়ন আটকাতে কোমরে পিস্তল গুঁজে বিডিও অফিস পাহারা! পুলিশের কাছে হাতে নাতে ধরা পড়লেন ব্যক্তি…
মনোনয়নকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকেই রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ডোমকল। সিপিএম-কংগ্রেসকে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কার্যত খণ্ডযুদ্ধে জড়ায় শাসক-বিরোধীরা। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে। সেই অশান্তির মাঝেই তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির কাছ থেকে পাওয়া গেল আগ্নেয়াস্ত্র।
সারাংপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি বাসির মোল্লার কাছ থেকে সেই আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করে পুলিশ। পিস্তল নিয়ে তিনি বিডিও অফিস পাহারা দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। হাতেনাতে ওই তৃণমূল নেতাকে পাকড়াও করে পুলিশ। কেড়ে নেওয়া হয় পিস্তল। অভিযোগ, শনিবার সকালে মনোনয়ন জমাকে কেন্দ্র করে ডোমকল জুড়ে যে উত্তেজনা ছড়ায় তার নেতৃত্বে ছিলেন এই তৃণমূল নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে বার বার অশান্তি পাকানোর অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় বাসির মোল্লা সহ আরও বেশ কিছু নেতার নামও জড়ায়। সেই বাসির মোল্লাকেই পিস্তল সহ হাতে নাতে ধরে ফেলে পুলিশ।
এই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য জুড়ে। বিরোধীদের দাবি মনোনয়ন পর্বেই যদি এই ছবি দেখা যায় বাংলায় তাহলে ভোটের সময় কী হবে? ভিডিওটি টুইটে শেয়ার করে রাজ্য প্রশাসনকে এক হাত নিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিজেপির রাজ্য সভাপতির প্রশ্ন, এরপরেও আপনি আর আপনার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনার বলবেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই?
ডোমকল কাণ্ডের পরই কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন রাজের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার৷ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তার জন্য পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে, দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। গোটা রাজ্যের তৃণমূলকর্মীদের উদ্দেশ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা, ‘‘দলের তরফ থেকে কড়া নির্দেশ, কেউ এই ধরনের ঝামেলায় জড়াবেন না৷ মনোনয়ন ঘিরে অশান্তিতে জড়াবেন না।’’
আগামী ৮ জুলাই, শনিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। গ্রামবাংলার ভোট ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই মুর্শিদাবাদে একের পর এক হিংসার ঘটনা! এই আবহে একটাই প্রশ্ন, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে কি অশান্তির এপিসেন্টার হতে চলেছে মুর্শিদাবাদ? আঠারোর ভোট-অশান্তির ছবি আবারও কি ফিরতে চলেছে তেইশে? উত্তর দেবে সময়।