নিজস্ব প্রতিনিধি: পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারের দায়িত্ব মূলত নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেবার কার্যত দিল্লি থেকে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতে দেখা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিaজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাডাদের। তবে তাতে লাভ হয়নি। রীতিমতো ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরে আসে তৃণমূল। তাই সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে রাজ্য নেতাতেই ভরসা রাখছে গেরুয়া শিবির। সেখানে কোনও কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখা যাবে না। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী বা অন্যান্য নেতাকেও দেখা যাবে না। অর্থাৎ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং মেদিনীপুরের সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বেই চলবে প্রচার। দিলীপ পদ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নেতা। কিন্তু যেহেতু তিনি বাংলার সাংসদ, তাই তিনিও প্রচারে প্রবল ভাবেই থাকবেন। তাই শুভেন্দু-দিলীপ-সুকান্ত, এই ‘ত্রিভুজ’কে কেন্দ্র করেই পঞ্চায়েতে বিজেপির প্রচার চলবে। তবে বাংলার দায়িত্বে যে কেন্দ্রীয় নেতারা রয়েছেন তাঁদের প্রচারে অংশ নিতে দেখা যেতে পারে।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ৯ বছর পূর্ণ হয়েছে মে মাসে। সেই উপলক্ষে দেশজুড়ে চলছে প্রচার অভিযান। বাংলাতেও সেই উপলক্ষে প্রচুর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোদি সরকারের সাফল্যের কথা পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে তুলে ধরার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। শুধু তাই নয়, চলতি মাসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার উপস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে তিনটি সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জুলাই মাস পর্যন্ত সেই সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে বিজেপির ‘মহা জনসম্পর্ক’ কর্মসূচি গ্রামাঞ্চলে হবে।
অতীতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রচার করেননি। তাই এবারেও তিনি প্রচারে থাকবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রচারে থাকবেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ইতিমধ্যেই ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচির মাধ্যমে একমাস ধরে কার্যত প্রচারই করছেন অভিষেক। তাই অভিষেক আবার জেলা ধরে ধরে প্রচার করবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে গেরুয়া শিবির প্রচারে ভরসা রাখছে রাজ্য নেতাদের উপরেই।
সাধারণত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাস্তাঘাট, পানীয় জল-সহ দৈনন্দিন চাহিদাগুলিকে প্রচারে নিয়ে আসে রাজনৈতিক দলগুলি। এটাই এক প্রকার প্রচলিত রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বিজেপির প্রচারে এগুলির পাশাপাশি দুর্নীতির ইস্যুও প্রবল ভাবে উঠে আসবে। সেভাবেই ঘুঁটি সাজিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে একুশের নির্বাচনের ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়েই বিজেপি কি এবার সিদ্ধান্ত বদলাল? স্থানীয় নির্বাচনে রাজ্য নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সে কথা ভেবেই? এর আগে দেখা গিয়েছে হায়দরাবাদে পুরভোটেও প্রচার করতে গিয়ে দু’দিন সেখানে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেবার বিজেপির ফল বেশ ভাল হয়েছিল। রাতারাতি তাদের ওয়ার্ড সংখ্যা চার থেকে বেড়ে চল্লিশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ স্থানীয় নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে প্রচারে যান এতেই তা স্পষ্ট। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এবার অন্য ছক কষছে বিজেপি। যা রাজনৈতিকভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তাই রাজ্য নেতাদের উপর ভর করে বিজেপি পঞ্চায়েত নির্বাচনে কতটা ভাল ফল করে সেটাই দেখার।