তৃণমূলকে ঠেকাতে সিপিএমের অস্ত্র ‘রিভার্স সুইং’! তাহলে কি এবার পঞ্চায়েতেও হবে ‘খেলা’?

তৃণমূলকে ঠেকাতে সিপিএমের অস্ত্র ‘রিভার্স সুইং’! তাহলে কি এবার পঞ্চায়েতেও হবে ‘খেলা’?

কলকাতা: ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিস, ব্রেট লি, শোয়েব আখতাররা ক্রিকেটের ২২ গজে যেভাবে রিভার্স সুইং অস্ত্র প্রয়োগ করে বিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে নাজেহাল করে দিতেন তা এখনও সবাই মনে রেখেছেন। আর ক্রিকেটের সেই রিভার্স সুইং অস্ত্র রাজনৈতিক ময়দানে ব্যবহার করছে সিপিএম। সিপিএম সূত্রে খবর, দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমই এই পন্থা নিয়েছেন। অর্থাৎ শাসক দল তৃণমূলকে সাধ্যমত প্রতিরোধ করতে হবে। যা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে মনোনয়ন পর্ব থেকে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় জেলায় সিপিএম কর্মীদের মনোনয়ন পেশে তৃণমূল বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।

কিন্তু তাতে দমে না দিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ করে অধিকাংশ জায়গায় মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন সিপিএম প্রার্থীরা। মুর্শিদাবাদের ডোমকলে এক প্রবীণ সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়ন আটকানোর জন্য বহু চেষ্টা করেও তৃণমূল সফল হয়নি বলে বামেদের দাবি। উত্তর চব্বিশ পরগনার মিনাখাঁয় সিপিএমের এক মহিলা প্রার্থীর মাথা তৃণমূল কর্মীরা ফাটিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এরপরেও লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরতে রাজি নন তিনি। আর এই প্রতিরোধকেই ‘রিভার্স সুইং’ বলছে রেড ব্রিগেড।

 এ বিষয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “রাজ্যে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট, আর ২০২৩ সাল কিন্তু এক নয়। শাসক দলের গা জোয়ারি আর লুট এখন আর সর্বত্র মানুষ চুপ করে মেনে নেবেন না। গোলমাল করতে এলে মানুষ পাল্টা তাড়া করবেন। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।”

ঘটনাচক্রে এবার পঞ্চায়েত ভোট পড়েছে ৮ জুলাই। সেদিন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিন। সেই প্রসঙ্গ তুলে সিপিএম প্রচার করছে যে, জ্যোতি বসুর আমলেই প্রথম ত্রিস্তর পঞ্চায়েত চালু হয়েছিল। সরকার মহাকারণ থেকে নয়, চলবে গ্রাম থেকে। এটাই বলতেন জ্যোতি বসু। সে কথা প্রচার করছে বামেরা। সিপিএম প্রচারে বলছে, ”বাম পথে গ্রাম৷”

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে সিপিএম শূন্য হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তারা। বিগত পুরসভা নির্বাচনগুলিতে সিপিএম কিছুটা হলেও প্রাসঙ্গিক হওয়ার চেষ্টা করেছে। অন্তত ভোটের ফল সে কথাই বলছে। বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনায় সিপিএম শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে লাগাতার আন্দোলন করেছে। জেলায় জেলায় তৃণমূলের অনেকেই দল ছেড়ে সিপিএমে যোগদান করছেন। রাজ্যের একাধিক জায়গায় এক যুগ পরে সিপিএম হারানো পার্টি অফিস পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। নতুন করে সেখানে আবার লাল ঝান্ডা উড়তে শুরু করেছে।

এই পরিস্থিতিতে সিপিএম চাইছে পঞ্চায়েতে মোটামুটি বলার মতো ফল করে লোকসভা ভোটে নতুন উদ্যমে ঝাঁপাতে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৪ শতাংশ আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি। তবে সেই ঘটনা এবার আর ঘটবে না বলে দাবি করছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই সূত্রেই জেলায় জেলায় তৃণমূলের সঙ্গে সমান তালে লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন বাম কর্মী-সমর্থকরা। তাই রাজনীতির বাইশ গজে এবার সিপিএমের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ‘রিভার্স সুইং’। তাতে শাসক দল কতটা বেকায়দায় পড়বে তা বোঝা যাবে ভোটবাক্স খোলা হলেই। তার আগে ‘অফেন্স ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স’ এই নীতিতে ভর করেই লড়াইয়ের ময়দানে থাকতে চায় রেড ব্রিগেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 5 =