নিষেধাজ্ঞা উঠতেই রুপোলি শষ্যের খোঁজে মৎস্যজীবীরা!

নিষেধাজ্ঞা উঠতেই রুপোলি শষ্যের খোঁজে মৎস্যজীবীরা!

আসন্ন বর্ষায় কি এবার বাঙালি মজবে ইলিশে? এর উত্তর পেতে আর হাতেগোনা কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। ১৬ জুন থেকে সমুদ্রের পাড়ি দিচ্ছে ট্রলার। রুপালি শস্যের খোঁজে বেরোচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। ১৫ তারিখ পর্যন্ত সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার উপর ছিল বিধিনিষেধ। আর সেই কারণেই এতদিন সমুদ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারেননি মৎস্যজীবীরা।

সম্প্রতি আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে বঙ্গে বর্ষা প্রবেশের কথা। আর সেই সম্ভাব্য কারণ দেখে সমুদ্রে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। মৎস্য প্রজননের জন্য এপ্রিল থেকে জুন এই দু’মাস সমুদ্র ও নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। আগামী ১৪ জুন শেষ হচ্ছে এই নিষিদ্ধ সময়সীমা। সেই মত এবছরে নতুন উদ্যমে শুরু হতে চলেছে সমুদ্র যাত্রা। জানা যাচ্ছে, প্রথম লটে অনেক কম সংখ্যক ট্রলার সমুদ্রে যাচ্ছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, পাথরপ্রতিমা, সাগর, নামখানা, সাগরদিঘির মতো জায়গাগুলোতে প্রস্তুত রয়েছে শয়ে শয়ে ট্রলার। ১৬ তারিখ থেকেই ট্রলারগুলি যাত্রা করবে গভীর সমুদ্রের উদ্দেশ্যে। যার জেরে মৎস্যজীবীদের মধ্যে এখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। ট্রলারে রঙ করা থেকে শুরু করে তেল ভরা, বরফ মজুত করা একগাদা কাজ। আর এই সমস্ত কাজ সারতে নাওয়া খাওয়া ভুলেছে এখন মৎস্যজীবীরা। জালের বাঁধন যাতে কোনোভাবে আলগা না হয় সেই কারণেই শেষ মুহূর্তে জালের গিঁটটাও বেঁধে নিচ্ছেন শক্ত করে। এবারের মৎস্যজীবীদের জালে বিশেষ বৈশিষ্ট্য আনা হয়েছে বলেও জানান দক্ষিণ ২৪ পরগনার সহ মৎস্য আধিকারিক (সামুদ্রিক) পিয়াল সরদার।

গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার দুর্ঘটনার কথা নতুন নয়। তাই দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে মৎস্যজীবীদের স্বচেতন ও সতর্কতার পাঠও ইতিমধ্যে দিয়েছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর আধিকারিকরা৷ অনেক ট্রলার জিপিআরএস ডিভাইস নিয়ে মাছ ধরতে যায় না। এর ফলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় ভারতীয় জলসীমানা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে সকল মৎস্যজীবী ও ট্রলার মালিককে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় ট্রলারে পর্যাপ্ত পরিমাণে লাইফ জ্যাকেট ও জিপিআরএস ডিভাইস নিয়ে যাওয়ার জন্য ও তা অন রাখার জন্য বলা হয়েছে। এরফলে গভীর সমুদ্রে কোনওরকম দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে খুব দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হবে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী।

মা কালি, জয় মা দূর্গা, এফবি দুর্গা, এফবি মহামায়া, বাবা লোকনাথ, বিপদতারিনী নামাঙ্কিত বিভিন্ন ট্রলার রওনা দেওয়ার আগে পুজো-অর্চনা সেরে ফেলেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার ডায়মণ্ডহারবার, কুলপি, ফলতা, কাকদ্বীপ, নামখানা, বকখালি, পাথরপ্রতিমা ও রায়দিঘি , কুলতলি , কানিং এর বিভিন্ন বন্দরগুলোতে প্রায় ২০০০-এরও বেশি মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। গত মরশুমে সেই ভাবে ইলিশ না পাওয়ায় গভীর সমুদ্রে আর পাড়ি দেয়নি ট্রলার গুলি। কিন্তু এই বছর আশায় বুক বেঁধেছেন মৎস্যজীবীরা। 

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ও পূবালী বাতাস হল ইলিশের আদর্শ উপকূল পরিবেশ । আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে ইলিশের দল মোহনার দিকে ছুটে আসে। এবারে আবহাওয়া ভালো হলে জালে উঠবে রূপালী শস্য ইলিশ। আশায় বুক বেঁধেছেন মৎস্যজীবীরা। এদিকে বাঙালির প্রিয় ইলিশের অপেক্ষায় ভোজন রসিক বাঙালি। কবে বাজারে উঠে আসবে ইলিশ সেদিকেই তাকিয়ে আমজনতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen + 6 =