উষ্ণতম জুন মাস দেখছে বিশ্ব। আগের সব রেকর্ডকে পিছনে ফেলে দিয়েছে চলতি বছরের জুনের তাপমাত্রা। বাড়তে থাকা তাপমাত্রা, বিপদ ডেকে আনছে পৃথিবীর বুকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনেও। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা থাকা সুন্দরবন ক্রমশ জলের তলায় হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ। বেঁচে থাকা স্থলভূমিতে ফের নতুন করে তৈরি হচ্ছে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। এভাবেই স্থলভাগের দিকে চলে আসছে সুন্দরবন।
কলকাতায় আয়োজিত প্রথম আন্তর্জাতিক ডেল্টা সামিটে উপস্থিত হয়ে এবিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের কথায়, সুন্দরবনের রক্ষাকবচ হল ম্যানগ্রোভ। কিন্তু, সেই ম্যানগ্রোভের চরিত্রের এভাবে ক্রমাগত বদল ঘটছে। তার ফলে সুন্দরবনের পশু, পাখি, উদ্ভিদ ও সেই অঞ্চলের মানুষও পরিযায়ী হয়ে যাচ্ছে। এর জন্য অবশ্য শুধু জলবায়ুর পরিবর্তনকেই নয়, সুন্দরবনের আর্থ সামাজিক পরিবেশকেও দায়ি করছেন বিজ্ঞানিরা। তাদের মতে, স্থানীয় মানুষরা কাজ পাচ্ছেন না সুন্দরবনে। ফলে সেখানকার প্রচুর বাসিন্দা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় কিংবা রাজ্যের বাইরে চলে যাচ্ছেন। পরিবেশ বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় ম্যানগ্রোভ। আয়লা থেকে আম্ফান, উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ঠেকাতে ঢাল হিসেবে অতীতে কাজ করেছে এই সুন্দরবন। কিন্তু, সেই ম্যানগ্রোভ এখন পরিযায়ী। কারন, এখানকার বাস্তুতন্ত্র এখন বিপন্ন।
- কেন বিপন্ন সুন্দরবন?
সুন্দরবনের অরণ্য, চাষের জমিকে ভেড়িতে পরিণত করে যেভাবে মাছ চাষের পরিমাণ বাড়ছে এলাকায় তা, বিপন্ন বাস্তুতন্ত্রকে আরও সঙ্কটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গত কুড়ি বছরে সুন্দরবন বাস্তুজগতের এক হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ বন, দু’হাজার হেক্টরেরও বেশি পলিতট, আর চব্বিশ হাজার হেক্টরের মতো চাষের জমি চিংড়ির ভেড়িতে পরিবর্তিত হয়েছে। তার মধ্যে দুই-তিন ফসলি জমিও আছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝাতে এই পরিসংখ্যানই যথেষ্ট।
যদিও সুন্দরবন বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগে একাধিক প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকায় শুরু হয়েছে ‘ম্যানগ্রোভ ইনিশিয়েটিভ ফর শোরলাইন হ্যাবিট্যাটস অ্যান্ড ট্যানজিবেল ইনকামস বা মিষ্টি প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্পে উপকূল রেখা বরাবর ম্যানগ্রোভ গাছের বন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকায় এই কাজ শুরু হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণা বনদফতরের উদ্যোগে এই কাজ চলছে। গতবছর রাজ্য সরকারের উদ্যোগে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা ও মেদিনীপুরে ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ বসানো হয়েছিল। কেন্দ্রের মিষ্টি প্রকল্প সেই রেকর্ড ভাঙতে চলেছে বলে খবর। সরকারের এই উদ্যোগ সুন্দরবন বাঁচাতে কতটা ফলপ্রসূ হয় সেটাই এখন দেখার।