গুড়-বাতাসা বিলি থেকে চড়াম চড়াম ঢাক বাজানো। ভোট এলেই নিজস্ব কায়দায় দাওয়াই দিতেন অনুব্রত মণ্ডল। গরম করতেন ভোটের হাওয়া। কিন্তু এবার দুয়ারে যখন পঞ্চায়েত ভোট, তিনি গরু পাচার মামলায় তিহাড় জেলে বন্দি। সশরীরে জেলায় হাজির নেই দাপুটে এই তৃণমূল নেতা। কিন্তু, জেলায় তাঁর প্রভাব এখনও অক্ষুণ্ণ। অনুব্রতের জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে হাজারেরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে তৃণমূল। কেষ্ট গড়ের এই ফলাফল নিঃসন্দেহে চমকে দেওয়া মত। বীরভূম তৃণমূলে শেষ কথা ছিলেন জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর নেতৃত্ব এবং নজরদারিতেই ভোট হত বীরভূমে।
গত বার, অর্থাৎ ২০১৮ সালে বীরভূম জেলা পরিষদে আসন ছিল ৪২টি। যার সব ক’টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতিতেও প্রায় সব আসনই দখল করে শাসকদল। বিরোধীদের মতে, গত বারের নির্বাচনে বীরভূমে প্রায় ৯৩ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিল বিরোধীরা। কিন্তু এবছর? গরু পাচার মামলায় ৯ মাস ধরে জেলবন্দী বীরভূমের বাঘ, ভোট করানোর নেতাই যখন জেলে, তাহলে কী পাল্টে যাবে জেলার রাজনৈতিক মানচিত্র? এই প্রশ্ন নিয়ে যখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি তখন চমকে দেওয়া তথ্য দিল কমিশন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ে নিরিখে রাজ্যে এগিয়ে অনুব্রতর জেলা। কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে—
- গ্রাম পঞ্চায়েত:
জেলায় মোট আসন- ২,৮৫৯ টি
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল জিতেছে- ৮৯১ টি
- পঞ্চায়েত সমিতি:
মোট আসন- ৮৯০
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল জিতেছে- ১২৭
- জেলা পরিষদ:
মোট আসন- ৫২
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল জিতেছে- ১
সব মিলিয়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ১,০১৯ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁর অনুপস্থিতিতেও দলের এমন ফলাফল বলে দিচ্ছে, জেলায় বিরোধী সংগঠন বলতে কিছুই নেই। যদিও অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির পর থেকেই বীরভূমে তৎপরতা বাড়াতে শুরু করে বিরোধী শিবির। ঘন ঘন বীরভূম সফর করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দলীয় সংগঠনকে চাঙ্গা করতে নেমে পড়েন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। আবার ভোট আবহে সিউড়িতে গিয়ে সভা করেছেন খোদ অমিত শাহ। তার পরেও পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে বীরভূমে জয়ের ধারা অব্যাহত তৃণমূলের। যদিও, এর পিছনে অবশ্য সন্ত্রাসের তত্ত্বকেই তুলে ধরছে বিজেপি। বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে তৃণমূল। যে কয়েকটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে সেই সব জায়গার প্রার্থীদের আমরা কোনও ভাবে দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে এসে রেখে রক্ষা করছি। ২০১৮ নির্বাচনের পর লোকসভা ভোটে তৃণমূল এই জোরজুলুম করার ফল পেয়েছিল। এ বারও সাধারণ মানুষ এর জবাব দেবে।’’
অনুব্রতর গ্রেফতারের পর বীরভূমের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূমের জন্য তৃণমূলের কোর কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। সেই কমিটিতে রয়েছেন নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখ। যদিও এলাকায় কাজল অনুব্রতর বিরোধী গোষ্ঠী হিসাবেই পরিচিত। এমন আবহে হাজারেরও বেশী আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ে উচ্ছ্বসিত ঘাসফুল শিবির। তৃণমূলের বীরভূম জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী জানান, পঞ্চায়েতের বাকি আসনগুলিতেও এই জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে।