কলকাতা: দিনভর সংসার সামলানোই তাঁদের কাজ৷ ছুটি বা বিরাম, কোনওটাই তাঁদের বরাদ্দে নেই৷ পরিবারের সদস্যদের যাবতীয় খুঁটিনাটির উপর নজর থাকে তাঁদের। সব দায়িত্ব মাথায় নিয়েও আখিরে কী পান গৃহবধূরা? সাম্প্রতিক একটি মামলার রায় ঘোষণার সময় এই বিষয়টি তুলে ধরে মাদ্রাজ হাই কোর্ট। আদালতের বক্তব্য, পরিবারের যাবতীয় সম্পত্তিতে সমান অধিকার থাকবে গৃহবধূদের। কারণ এই সম্পত্তি অর্জনের ক্ষেত্রে তাঁদের পরোক্ষ অবদান রয়েছে, যা অনস্বীকার্য।
এক দম্পতির বিবাদের মামলার রায় দিতে গিয়েই তাৎপর্যপূর্ণ রায় দেয় মাদ্রাজ হাই কোর্ট। কান্নাইয়ান নায়ডু নামে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক তাঁদের৷ ১৯৬৫ সালে বিয়ে হয় এই দম্পতির। দীর্ঘদিন বিদেশে কর্মরত ছিলেন কান্নাইয়া। সেই সময় দেশে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। শুধু তাই নয়, সংসারের হালও ধরেন তিনি৷ এদিকে, কান্নাইয়ানের অভিযোগ, তাঁর উপার্জিত অর্থ দিয়ে যে সম্পত্তি কেনা হয়েছিল, সেগুলি আত্মসাৎ করতে চাইছেন তাঁর স্ত্রী। এমনকি তাঁর সম্পত্তি হাতানোর জন্য অন্যদের সাহায্য নিয়েছেন বলেও অভিযোগ তাঁর৷
২০০২ সালের দায়ের হওয়া এই মামলার শুনানির সময় কান্নাইয়ানের স্ত্রী পালটা যুক্তি দেখান, তিনি একা হাতে সংসারের সব দায়িত্ব পালন করেছেন৷ সংসার সামলাতে গিয়ে তাঁর কেরিয়ার গড়া সম্ভব হয়নি। উল্টে তিনি তাঁর সমস্ত গয়না ও সম্পত্তি বিক্রি করে স্বামীর বিদেশযাত্রার খরচ জোগাড় করেছেন। স্বামীর উপার্জিত অর্থের পাশাপাশি সংসারের জোলায় টানতে সেলাইয়ের কাজ করেছেন৷ দু’জনের সম্মিলিত অর্থ দিয়েই সংসারের যাবতীয় সম্পত্তি কেনা হয়েছে৷
দু’পক্ষের বয়ান শোনার পর মাদ্রাজ হাই কোর্ট বলে, সংসারের যাবতীয় সম্পত্তিতে সমান অধিকার রয়েছে গৃহবধূরও। তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে রোজগার না করলেও, অর্থ উপার্জনে স্বামীকে সাহায্য করেন তাঁরা। ছুটি না নিয়েই তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। আদালত আরও মনে করিয়ে দেয়, স্বামী ও স্ত্রী আসলে গাড়ির দুই চাকা। তাই সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রেও তাঁদের উভয়ের সমান অধিকার থাকবে। আদালত আরও জানায়, গৃহবধূর অবদান প্রসঙ্গে আইনে কিছু লেখা নেই। তবে এই বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ থাকতেই পারে। গৃহবধূদের ন্যায্য অধিকার থেকে কোনও আইনই বঞ্চিত করতে পারে না।