কলকাতা: পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফলাফল কি হতে পারে তার আন্দাজ পেতে সমীক্ষা চালিয়েছিল একটি পেশাদার সংস্থা। তাতে দেখা যাচ্ছে গতবারের চেয়ে ফল খারাপ হতে পারে তৃণমূলের। যদিও সার্বিকভাবে তৃণমূল বিরোধীদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে বলে সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে। সমীক্ষা কখনও মেলে, কখনও মেলে না। বাস্তবটা বোঝা যাবে ফলাফল প্রকাশের পরেই। তবু এই ধরনের সমীক্ষা ঘিরে রাজনীতি সচেতন মানুষের একটা কৌতূহল থাকে। আর সেই সূত্রেই বিষয়টি নিয়ে যথারীতি আলোচনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে সরকার তথা পঞ্চায়েত পরিচালনায় তৃণমূলের পারফরম্যান্স খারাপ বলে মনে করছেন চল্লিশ শতাংশ মানুষ। আর মনোনয়ন পর্বে হিংসার জন্য তৃণমূলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ৫৯ শতাংশ মনে করছেন। তার ভিত্তিতেই নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তৃণমূলের থেকে মুখ ফেরাতে পারেন বলে ৫২ শতাংশ মনে করছেন। সমীক্ষা যদি মোটের উপর ফলাফলের সঙ্গে মিলে যায় তখন এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠবে যে, তবে কি এভাবেই তৃণমূলের পাশ থেকে আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ? সেক্ষেত্রে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্য রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে মাইলস্টোন হয়ে থাকবে? ঘটনা হল ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্যে সিপিএম তথা বামেদের পতন শুরু হয়। সিপিএম যে সাংগঠনিকভাবে শক্তি হারাচ্ছে সেটা সেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলেই বোঝা গিয়েছিল। আর সেটা পরিষ্কার হয়ে যায় তার পরের বছর অর্থাৎ ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে। এরপর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নতুন ইতিহাস তৈরি হয় বাংলার বুকে। কথায় বলে ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। সেটা কি তবে এই পঞ্চায়েতেই বোঝা যাবে? এই জল্পনা স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে।
যেভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকেই লাগামছাড়া হিংসা হয়েছে তাতে তৃণমূলের উপর ক্ষুব্ধ রাজ্যবাসীর একটা বড় অংশ। তৃণমূলের চিন্তার কারণ এটাই যে, তাদের সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়। অথচ এক যুগের বেশি সময় ধরে সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ তৃণমূলই পেয়ে আসছে। তবে কি সেই ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরতে শুরু করেছে? আর সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে ভোট সমীক্ষায়? এই চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে। তাই এটা পরিষ্কার পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে একেবারেই স্বস্তিতে নেই শাসক দল। তাদের যে ভূমিক্ষয় শুরু হওয়ার মুখে সেই ইঙ্গিত কিন্তু দিয়ে দিল সমীক্ষা। শেষ পর্যন্ত ফলাফলে কি দেখা যায় এখন তারই অপেক্ষা।