পঞ্চায়েতে কী কী কারণে সিপিএম ভাল ফল করতে পারে? ফের স্বমহিমায় রেড ব্রিগেড?

পঞ্চায়েতে কী কী কারণে সিপিএম ভাল ফল করতে পারে? ফের স্বমহিমায় রেড ব্রিগেড?

39f9bd8977fec9266d8daedc5849e3aa

কলকাতা:  ১৯৭২ সালে পশ্চিমবঙ্গে হেরে যাওয়ার পর ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল সিপিএম পার্টি। অভিযোগ কংগ্রেসের নজিরবিহীন সন্ত্রাসের কারণে সেবারের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের ভরাডুবি হয়েছিল। তখন সিপিএমের বহু নেতানেত্রী ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ চলে গিয়ে সংগঠন মজবুত করার কাজ করতেন। আর বামপন্থীরা গর্ব করে বলতেন রেড কোনও দিন ফেড হবে না। অর্থাৎ লাল রং ফিকে হবে না, তা সারা জীবন জ্বলজ্বল করবে। কিন্তু তৃণমূল জমানায় সিপিএম একেবারে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। তবে বেশ কয়েক মাস ধরে সেই অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। আর তাতেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখছে সিপিএম তথা বামেরা। রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন বহু জেলায় সিপিএম এবার তৃণমূলের রাতের ঘুম কেড়ে নেবে। কিন্তু কেন এ কথা বলছেন তাঁরা? কোন কোন ফ্যাক্টর কাজ করছে সেখানে?

প্রথম কথা হল তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লাগাম ছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এর পাশাপাশি মনোনয়ন পর্বের শুরু থেকেই বেলাগাম সন্ত্রাস চলছে জেলায় জেলায়।

সিপিএমের আমলেও ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ ছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ছিটেফোঁটা অভিযোগ ছিল কিনা সন্দেহ। তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোড়া অভিযোগ রয়েছে। সেখানে সিপিএম ক্ষমতায় নেই ১২ বছর হয়ে গেল। তাই দুই বা তিন দশক আগে সিপিএম আমলে কতটা হিংসা হয়েছিল রাজ্য জুড়ে, তা নিয়ে এ প্রজন্মের অধিকাংশ ছেলেমেয়ে আগ্রহী নন। তাঁরা সমকালীন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই চলতে চান। তাঁরা দুর্নীতি এবং সন্ত্রাস দুটিই প্রত্যক্ষ করছেন। আর এখন সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া এতটাই শক্তিশালী হয়েছে যে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছোটখাটো দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও সেগুলি নিমেষে মানুষের হাতের মুঠোয় চলে আসছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। এর মোকাবিলা করতে গিয়ে তৃণমূল ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির ‘সেটিং’ রয়েছে বলে যে অভিযোগ বামেরা বহুদিন ধরেই করছে, তা কিছুটা হলেও সংখ্যালঘু মানুষের মনে রেখাপাত করেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তাই দেখা যাচ্ছে তৃণমূলকে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে। সংখ্যালঘু ভোটের একটা অংশ সিপিএমের দিকে নিশ্চিত ভাবে ফিরছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। এই ভাবনার একটা বড় কারণ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম নিজে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। অতীতে রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন, সাংসদ ছিলেন। ছিলেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ছিটেফোঁটা দুর্নীতির অভিযোগ নেই।

এছাড়া সিপিএমের প্রচার সাধারণ মানুষের মনে যেভাবে সাড়া ফেলেছে তার কারণ হল দলে একগুচ্ছ তরুণ নেতৃত্বের উপস্থিতি। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, দীপ্সিতা ধর, সৃজন ভট্টাচার্য-সহ তরুণ নেতৃত্ব প্রচারে রাজ্য জুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তাঁদের ফ্রেশ ইমেজ ভরসা জোগাচ্ছে দলকে। সিপিএমের অধিকাংশ নেতানেত্রীর বক্তব্যে যথেষ্ট লজিক থাকছে। স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্ত কারণে সিপিএমকে নিয়ে টেনশন শুরু হয়ে গেছে তৃণমূলের। কারণ সিপিএম ভারতীয় রাজনীতিতে ‘রেজিমেন্টেড’ দল বলেই পরিচিত। রাজনীতির কারবারিরা মনে করেন দেরিতে হলেও তাই সিপিএম তাদের হারানো সংগঠন  পুনরুদ্ধার করতেই পারে। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে এই পঞ্চায়েত নির্বাচন সিপিএমের কাছে রীতিমতো অগ্নিপরীক্ষার মতোই। আর সেই পরীক্ষায় ‘কাস্তে হাতুড়ি তারা’ কামব্যাক করবে বলেই দলের লক্ষ লক্ষ সমর্থকের বিশ্বাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *