আরামবাগ: অশান্তির ভোটে এ এক অন্য ছবি৷ পঞ্চায়েত ভোটের গণনাকে কেন্দ্র করে ভাঙড় যখন উত্তপ্ত৷ একের পর এক লাশ পড়ছে, পুলিশ গুলিবিদ্ধ হচ্ছে, তখন একেবারে ভিন্ন ছবি দেখা গেল হুগলিতে৷
আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির ২০ নম্বর আসনে তখন ভোট গণনা চলছে৷ তিনটি ব্যালট বাক্স খুলে গণনাও হয়ে গিয়েছে৷ তাতে দেখা যায় বিজেপি প্রার্থী অরূপ কুমার দেওয়ান ১০০-র মতো ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু বাকি দুটি ব্যালট বাক্স কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শুরু হয় ব্যালট বাক্সের খোঁজ৷ অরূপ সোজা বিডিওর দরবারে হাজির হন। গণনা কেন্দ্রে শুরু হয় তন্ন তন্ন করে খোঁজ৷ কিন্তু ব্যালট বাক্সের হদিশ না পেয়ে অরূপের তখন কাঁদো কাঁদো অবস্থা। কারণ, তিনি আশাবাদী ছিলেন যে তিনি জিতবেন।
ব্যালট বাক্স নিখোঁজ হওয়ার খবরখানি পৌঁছে যায় আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের স্বামী তথা রিষড়া পুরসভার কাউন্সিলর সাকির আলির কাছে। তখন সাকির অরূপকে নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে যান। তিনি নিজে ব্যালট বাক্স খুঁজে দেওয়ার অনুরোধ জানান। পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে তৃণমূল কাউন্সিলরের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন বিজেপি প্রার্থী।
অবশেষে বাকি দুটো ব্যালট বাক্স খুঁজে এনে গণনা শুরু হলে দেখা যায়, অরূপ দেওয়ানই জিতেছেন। ভোটে জিতে শংসাপত্র হাতে নিয়েই সোজা চলে যান তৃণমূল কাউন্সিলরের কাছে৷ সাকিরের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেন বিজেপি প্রার্থী।
পরে আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির ২০ নম্বর আসন থেকে জয়ী প্রার্থী অরুপ কুমার দেওয়ান বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই আমি ১৩১ ভোটে এগিয়ে ছিলাম। তারপর দেখি দুটি বক্স উধাও৷ কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। বিডিওর অফিসে সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপর আরামবাগের সাংসদ অপরুপা পোদ্দারের স্বামী সাকির আলি সেখানে আসেন এবং আমাকে সাহায্যের আশ্বাস দেন। তিনি বিডিওর সঙ্গে কথা বলেন এবং উধাও হওয়া বক্স উদ্ধারের ব্যবস্থা করে দেন। ব্যালট বক্স উদ্ধারের পর ১৪৬ ভোটে জয় লাভ করি। সব দলেই ভালো নেতা থাকে। উনি তৃণমূলের ভালো নেতা।’’
অন্যদিকে সাকির বলেন,“আমাদের প্রার্থী ভেবেছিলেন, উনি জিতে গিয়েছেন। তাই বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু অরূপ পরিশ্রম করে বাক্স খুঁজছিল। মানুষের রায়েই ও জিতেছে।” তিনি আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শই হল মানুষের পাশে থাকা। পঞ্চায়েতে হার-জিত থাকবেই। কিন্তু আরামবাগে আমরা অন্তত চেয়েছি, পারস্পরিক সৌহার্দ্য থাকুক। মানুষ যাঁর পক্ষে রায় দেবেন তিনিই জিতবেন।”