শুভেন্দু-নওশাদকে নিয়েই কী বেশি চিন্তিত তৃণমূল? উঠছে গুরুতর অভিযোগ!

শুভেন্দু-নওশাদকে নিয়েই কী বেশি চিন্তিত তৃণমূল? উঠছে গুরুতর অভিযোগ!

কলকাতা: তিনি ভাঙড়ের বিধায়ক। তবুও নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারলেন না নওশাদ সিদ্দিকী। বিশাল পুলিশ বাহিনী দিয়ে ব্যারিকেড করে আটকে দেওয়া হল আইএসএফ বিধায়ককে। একজন জনপ্রতিনিধি নিজের এলাকায় ঢুকতে পারছেন না, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কি এতটাই অবনতি হয়েছে? শুধু আইএসএফ বিধায়ক বলে নয়, একই ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে বারবার রাজ্য প্রশাসন বাধা দিচ্ছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। রাজ্য রাজনীতি এই দু’জনকে নিয়ে যে যথেষ্ট আন্দোলিত সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বারবার তাঁরা খবরের শিরোনাম এসেছেন। কিন্তু কেন? তাঁদের নিয়ে এত চিন্তা কেন করছে তৃণমূল? কি ইউএসপি রয়েছে এই দুই রাজনৈতিক নেতার?

শুভেন্দু অধিকারী তখন তৃণমূলে। একাধিক দফতরের মন্ত্রীর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি নিগমের চেয়ারম্যান। নন্দীগ্রাম আন্দোলন যেভাবে তিনি সংঘটিত করেছিলেন তাতে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার কথা জেনে যায় গোটা বাংলা। পরবর্তীতে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর শুভেন্দুর সাংগঠনিক ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই বহু গুণে বেড়ে যায়। সেই সময় রাজনীতির কারবারিরা একটা কথা বলতেন যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মায় বিধানসভা বা অন্য কোনও নির্বাচনে যাঁরা জিতে আসতে পারেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন শুভেন্দু। তৃণমূলের এমন কেউ নেই যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছাড়া জিতে আসতে পারেন। সেখানে নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম শুভেন্দু। না হলে তিনি নন্দীগ্রামে মমতাকে হারাতে পারতেন না।

একুশের নির্বাচনে তৃণমূলের পক্ষে ব্যাপক সমর্থন ছিল বলেই তারা ডাবল সেঞ্চুরি পেরিয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে মহিলাদের ভোটের বড় অংশ তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শুভেন্দুকে হার মানানো যায়নি। আর বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর গত দু’বছর ধরে রাজ্যের নানা প্রান্তে চষে বেরিয়েছেন শুভেন্দু। যেখানে অনিয়ম অশান্তি হিংসার ঘটনা ঘটেছে সেখানেই তিনি ছুটে গিয়েছেন। দলের কর্মী সমর্থকদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশাসনকে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিন দশকের বেশি সময় ধরে রাজ্যে যখন সিপিএম সরকারে ছিল তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই ভূমিকাতেই দেখেছে রাজ্যবাসী। কিন্তু বিগত কয়েক মাসে দেখা গিয়েছে শুভেন্দু কোথাও মিটিং মিছিল করতে গেলেই প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। তখন আদালতের দ্বারস্থ হয়ে কর্মসূচিতে সামিল হতে পেরেছেন বিরোধী দলনেতা।

শুভেন্দুর সাংগঠনিক দক্ষতা আছে বলেই এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তুলনামূলকভাবে বিজেপির ফল নন্দীগ্রাম তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে অন্যান্য জেলার তুলনায় ভাল হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা যেভাবে তিনি আক্রমণাত্মক ভাষায় শাসককে আক্রমণ করেন, তা বিজেপির অন্যান্য নেতাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। এই সমস্ত বিষয়গুলি শুভেন্দুর অন্যতম ‘ইউএসপি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একই ভাবে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী অন্য ধারায় রাজনীতি করছেন। তিনি যেভাবে শান্ত ধীরস্থির ভঙ্গিতে তৃণমূলকে আক্রমণ করছেন, তা শাসকের কাছে যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলেন নওশাদ। আর জেতার পর তাঁর প্রতি সমর্থন বহু গুণে বেড়ে গিয়েছে। আইএসএফের দাবি নওশাদের জনপ্রিয়তা যেভাবে দিন দিন বাড়ছে তাতে ভয় পেয়েই তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ এনেছে তৃণমূল।

ভাঙড়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা বলে পরিচিত আরাবুল ইসলামের খাসতালুক পোলেরহাট-২ এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে আইএসএফ এবং জমি কমিটির কাছে হেরে গিয়েছে তৃণমূল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট তৃণমূলের পাশ থেকে কিছুটা হলেও এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সরেছে। ফলাফলে দেখা গিয়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি অঞ্চলে তৃণমূল বিরোধীরা আগের তুলনায় ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। রাজনৈতিক মহল মনে করে এই বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছে। তবে কি সেই কারণেই ভাঙড়ে ঢুকতে দেওয়া হল না নওশাদকে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। উল্লেখ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের ঝড় দেখা গিয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ বহু জায়গায় বুথ দখল করে জয় পেয়েছে শাসক দল।

এছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল পঞ্চায়েতের তিনটি স্তর মিলিয়ে ১০ শতাংশের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে। বিরোধীদের দাবি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের ফল আরও ভাল হতো। এই পরিস্থিতিতে নওশাদ এবং শুভেন্দু যেভাবে তৃণমূল বিরোধিতায় ঝাঁজ আরও বাড়াচ্ছেন তাতে নিঃসন্দেহে উদ্বেগ বাড়ছে শাসক দলের। লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত রাজ্য রাজনীতি এভাবেই যে আবর্তিত হবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × one =