কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন আর সেই সূত্রে হিংসা ও অশান্তি, এই বিষয়গুলি কি মেড ফর ইচ আদার হয়ে উঠেছে? অন্তত পশ্চিমবঙ্গের সাড়ে তিন দশকের রাজনৈতিক ইতিহাস তেমন কথাই বলছে। তেইশের পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে নজিরবিহীন সন্ত্রাস দেখেছে রাজ্যবাসী। তবে শুধু রাজ্য কেন, বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসার এত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত যে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে বেলাগাম সন্ত্রাসের কথা জেনে গিয়েছে গোটা দেশ। শুধু দেশ কেন, পাকিস্তানের বিখ্যাত ‘ডন’ পত্রিকাতেও পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাসের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই কারণে তৃণমূলের অস্বস্তি অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৪ শতাংশ আসনে ভোট হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। বাকি যে ৬৬ শতাংশ আসনে ভোট হয় সেখানেও এক কোটির বেশি মানুষ ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণে বুথের সামনেই ভোটারদের বড় অংশ পৌঁছতে পারেননি বলে অভিযোগ ওঠে। তার ফল হাতেনাতে পাওয়া গিয়েছিল গত লোকসভা নির্বাচনে।
তৃণমূলের আসন সংখ্যা এক ধাক্কায় নেমে আসে বাইশে। অন্যদিকে বিজেপির আসন বেড়ে হয়ে যায় ১৮। তবে কি আগামী লোকসভা নির্বাচনে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যাবে? এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখনও পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপির পাশাপাশি বিভিন্ন দল বিষয়টিকে কিন্তু একেবারেই ভালভাবে নিচ্ছে না। সবচাইতে বড় কথা তৃণমূলের সহযোগী যে দলগুলি রয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, তারাও কিন্তু তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। তবে কি সবাই মনে করছেন তৃণমূল যে বিপুল জয় পেয়েছে সেখানে পেশিশক্তি অন্যতম কারণ? এর আগে দেখা গিয়েছে তৃণমূল যে কোনও নির্বাচনে বড় জয় পেলে অখিলেশ সিং যাদব, উদ্ধব ঠাকরে, কুমারস্বামী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ বিভিন্ন বিজেপি বিরোধী দলের নেতৃত্ব ফোন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু এবারে তেমনটা ঘটেছে কিনা সেটা স্পষ্ট নয়।
এই পরিস্থিতিতে বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোটের দ্বিতীয় বৈঠক হতে চলেছে। ঘটনা হল দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যে স্থানীয় স্তরের পাশাপাশি বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে কোনও দিনও সামান্যতম অশান্তির খবর পাওয়া যায় না। শাসক বিরোধী নির্বিশেষে রাজ্যে রাজ্যে শান্তিতেই ভোটে অংশ গ্রহণ করে। সেখানে ব্যতিক্রম শুধু পশ্চিমবঙ্গ। সিপিএম থেকে তৃণমূল, প্রতিটি নির্বাচন ঘিরে বারবার সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গে।
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ইস্যুতে মমতা যেভাবে আন্দোলন করেছিলেন তাকে সাধুবাদ জানিয়েছিল গোটা দেশ। এমনকী বিদেশের পত্র-পত্রিকাতেও সেই জমি আন্দোলনের কথা প্রকাশিত হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ভোট সন্ত্রাস দেশজুড়ে নিন্দিত ও ধিকৃত হচ্ছে।
গণনার সময় তৃণমূল প্রার্থী হারছেন বলে ব্যালট পেপার খেয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন ঘটনার কথা বাংলার মানুষ আগে কখনও দেখেননি বা শোনেননি। তাই এটা স্পষ্ট, যে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাতে বাংলার শাসক দল অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে সর্বভারতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে। লোকসভা নির্বাচনে এই ফ্যাক্টর তৃণমূলের বিরুদ্ধে যেতে পারে বলে ভোট বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে গোটা বিষয়টি তৃণমূল কতটা সামলাতে পারে সেটাই দেখার।