কলকাতা: সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম কাণ্ডের পর বুদ্ধিজীবী সমাজের বড় অংশ রাস্তায় নেমে, মিছিল করে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। সেই সরকারের এক মুহূর্ত আর ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়, এই আওয়াজ তুলেছিলেন তাঁরা। এরপর ১৫ বছরের বেশি সময় কেটে গিয়েছে।
রাজ্যে তৃতীয় তৃণমূল সরকারের শাসন চলছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে যে বেলাগাম সন্ত্রাস হয়েছে, যাতে পঞ্চাশ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী কেন নীরব সেই প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহল। এই বিষয়গুলি তাঁরা চোখ থাকতেও কি দেখতে পাচ্ছেন না? এই প্রশ্ন উঠছে। যদিও দেরিতে হলেও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন। একটি নাগরিক সম্মেলন থেকে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি বিষয়টি নিয়ে পথে নামার ডাক দিয়েছে। সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অপর্ণা সেন। সেখানে একটি প্রস্তাবের পক্ষে সই সংগ্রহের ডাক দিয়েছেন অপর্ণার পাশাপাশি শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার, পরিবেশকর্মী নব দত্ত, জনস্বাস্থ্য আন্দোলন কর্মী স্বপন জানা, ভাঙড় জমি রক্ষা কমিটির মির্জা হাসান-সহ অনেকেই।
এভাবেই ভোট হিংসা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোলা চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখেন অপর্ণা। তিনি বলেন, পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে ৩৭ দিনে ৫২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বহু মানুষ নিখোঁজ। এই অরাজকতার দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এবং মুখ্যমন্ত্রী আপনার। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের উপর নির্ভর করে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে চলতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এই দায়িত্ব আপনি কোনও ভাবে অস্বীকার করতে পারেন না।
সেই সঙ্গে অপর্ণা জানিয়েছেন তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই যুক্ত নন। সেই অর্থে কোনও রাজনৈতিক রং নেই তাঁর। মানুষের স্বার্থেই তিনি এভাবে মুখ খুলছেন বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী।
ঘটনা হল সুশীল সমাজের বহু প্রতিনিধিকে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম কাণ্ডের সময় পথে নামতে দেখা গিয়েছিল। রাজ্যে পরিবর্তনের পিছনে তাঁদের বড় ভূমিকা ছিল। তাঁরা যেভাবে জনমত গঠন করেছিলেন তা ছুঁয়ে গিয়েছিল রাজ্যবাসীর মনকে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এখন তাঁদের অধিকাংশ নীরব দর্শক হয়ে বসে রয়েছেন।
চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন কিছুদিন আগে ভোট হিংসার বিরুদ্ধে মুখ খুললেও রাতারাতি আবার ‘স্পিকটি নট’ হয়ে গিয়েছেন। তাই সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, দেড় দশক আগে সুশীল সমাজকে যে ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল, তা কী আবার দেখা যাবে? সেই সম্ভাবনার সূচনাই কি করলেন অপর্ণা? যদিও বিরোধীদের দাবি, বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশ নানা ভাবে তৃণমূল সরকারের থেকে আর্থিক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন বলেই তাঁরা পথে নামছেন না। সবকিছু দেখেশুনেও চুপ করে রয়েছেন সেই অংশের বিশিষ্টজনেরা। তাই নতুন করে ভোট হিংসার বিরুদ্ধে রাজপথে সুশীল সমাজকে দেখা যায় কিনা এখন সেটাই দেখার।